গায়ের পথ ধরে
যখন যেতাম বাড়ি,
পিছনের বারান্দায় কে বসে আছে-
চিনতে হত না দেরি।
বলতাম রোদের দিনে
বসে কেন আছো মিছে?
বলতে তুমি, আজ শুক্রবার
তোদের অপেক্ষায়-
মন যে বসে না কাজে।


বিকালে যখন আসতাম আবার ফিরে
বলতে তুমি, বাবার হাতখানি ধরে,
আবার যখন ছুটি পাস
দেখে যাস তুই মোরে।
পাড়া-পড়শীরা কানাকানি করতো
কেমন তোমার ছেলে?
আজই বাড়ি এলো
আবার আজই গেল চলে!
বলতে তুমি, ছেলে আমায় বড় ভালোবাসে
দেখ, কত কি এসেছে নিয়ে?
শহরেতে সে চাকরি করে
সময় যে নাহি মেলে।


তারপর যখন তুমি
আসতে মোদের বাসায়,
তোমার সঙ্গে কাটতো সময়
গল্প আর রসিকতায়।
মোরা পড়তাম, তুমিও পড়তে
যত ছিল ধর্মের বই,
বলতাম মোরা, এখন তুমি পড়াশোনা করো
ছেলেবেলায় করেছো কি?
বলতে তুমি, তেরো বছর বয়সে
হয়েছে বিয়ে,
তারপর তো আর
সময় যে পাই নি।
সারাদিন ধরে কাজ করে
যখন বিছানায় এসেছি,
বইয়ের পাতা যদিও খুলেছি
চোখ মেলতে যে পারি  নি।
তখন প্রার্থনা করতাম, হে বিধাতা
আমি যতটুকু কষ্ট পেয়েছি
মোর বউমারা যেন না পায় তা।


বাসায় যখন ছাড়তাম টিভি
তুমি বলতে, পড়তে বসো দাদা,
কত কষ্ট করে তোমার বাবা
তা দেখ নাকি।
তারপর যখন বাবার সাইকেলের শব্দ শুনে
বসতাম পড়তে,
তোমার ঠোঁটের কোণের হাসিটুকু
আজও পড়ে মনে।
বাবাকে বলতে তুমি,
এত সময় ধরে
কি পড়েছে ওরা,
একবার দেখ তো যাচাই করে,
বলতাম মোরা, বকবকানি থামিয়ে
একটু থাকো না চুপ করে।


শুধু পরীক্ষার সময়টুকু
তুমি থাকতে মোদের বাসায়
তাই তো মনে হতো
পরীক্ষা যেন শেষ না হয়।
পড়তে বসো, পড়তে বসো,
তোমার সেই স্বর, আজও কানে বাজে
শুধু তোমায় নাহি দেখি,
কোথায় যেন চলে গেছো
সবাইকে দিয়ে ফাঁকি।।