বায়ান্নর ভরদুপুরে
কাজী হেলাল


একটি দুটি হাজার ফুলের ঢল নেমেছে
কৃষ্ণচূড়া রক্তজবা দীর্ঘ পায়ে পথ মেলেছে
গুলি চলে ফাগুন মাসের ভরদুপুরে
একটি দুটি তিনটি পাখি
পড়ে আছে পথের ধারে
ডাকছে তারা উচ্চস্বরে
“ওই অজগর আসছে ধেয়ে”
কৃষ্ণচূড়ার রক্ত ছুঁয়ে চলে গেছে অনেক দূরে
ফুলগুলি তাই পাপড়ি মেলে সূর্যমুখী স্বপ্নজুড়ে।


রাজপথে আজ হাঁটতে মানা
বাংলা ভাষায় গাইতে মানা
বলতে মানা
চলতে মানা
মা মা বলে ডাকতে মানা।


বাংলা আমার দাবির ভাষা
বাংলা আমার বাঁচার আশা
এই ভাষাতেই কাব্য গান
দিয়ে লক্ষ সাহসী প্রাণ।


ভরদুপুরে গুলি চলে
মিছিলেরই অগ্রভাগে ভাষার পুত্র
পড়ে থাকে একতারা তার বুকের পরে
জন্ম নেবে মায়ের ঘরে
লক্ষ কোটি বছর পরে।
স্নিগ্ধ হাসি ঠোঁটের কোণে
রক্তে ভেজা স্বপ্ন বোনে।  
শহিদ হয়ে মিশে গেছে
স্বপ্নলোকে তারার দেশে
দিকদিগন্তের অন্য পাশে
ফিরবে আবার মায়ের কোলে
বীরপুরুষ এক বাংলাদেশে।
সেই একুশের শুধবে ঋণ
মাগো আমরা গুনছি সে দিন।


আজ দুপুরে গুলি চলে
যত্রতত্র গুলি চলে
কৃষ্ণচূড়ার ঘুম ভেঙেছে
মায়ের বুকে খুব লেগেছে!
বাণের জোয়ার বাঁধ ভেঙেছে
আজ দুপুরে গুলি চলে
গুলি চলে, গুলি চলে।


রাস্তাঘাটে নামছে মিছিল
সঙ্গে যাবি ডাকছে নিখিল
পলাশ ফুলের ঘুম ভেঙেছে
কীর্তনীয়ার বোল উঠেছে
হিংস্র দানব খুঁজছে পথ ফুঁসছে আবার
ফন্দি আঁটে মায়ের ভাষা কেড়ে নেবার!


গুলির শব্দে ঘুম ভেঙেছে
ছাত্র-যুবার ঘুম ভেঙেছে
আটই ফাগুন ভরদুপুরে
এক কাতারে সেই মিছিলে
ঊর্ধ্বাকাশে মুষ্টি তুলে
গান গেয়ে যায় মাটির সুরে।
বাংলা আমার ভাষার দেশ
বাংলা আমার মায়ের বেশ
বাংলা আমার মাটির গান
লক্ষ কোটি সজীব প্রাণ!