পানকৌড়ি ডাকে দুফর-রাতে!
কাজী হেলাল


বুকের মইধ্যে পানকৌড়িরে ছুঁইয়া দেহো;
তাপ লও চেনাগলি হৃদপিন্ডের;
তেমনই আছে যেমনডি তুমি রাইখা গ্যাছিলা।
আল্লার কসম কই ;দেই নাই কাউরে  
হাতের তালুতে নিকানো ঘরদোর,
অচিন বৃক্ষের বাকল!  


গাছের কোটরে, লুকাই্যয়া রাখছি কইতর ছানা।
ছোঁকছোঁক বিড়াল, য্যান না পায় কুনো খোঁজ।


এই দ্যাহ ;
এখনো লাইগা আছে চুলে, নদীর ঘোলা মাটি জল,
তেমনি আছে জবাকুসুম ত্যালের গন্ধ শরীলের আনাচে কানাচে-
পোড়া চোখে গর্ভবতী ধান তেমনই দোলে তেমনি নাচে ,
য্যামন রাইখা গ্যাছিলা অঘ্রাণের শ্যাষ অবেলায়।


মাথার মধ্যে কিমুন ধস নামে;
খলবল করে নদীর জল,উত্তরের বাতাসে উড়ে যে শাড়ির আঁচল,
বুকের মধ্যে যে চিক্কুর ; সে শুধু তোমারই লাগি  --
পাও নাই পরমান?


ক্যান; ক্যান তবে ভাটির দেশে গ্যালা ফ্যালাইয়া
তোমার গোলাভরা ধান--  
গামছার সুবাস শিয়রে নিথর পইড়া থাকে ;
কত নিদ্রাহীন রাত কাটে আমার ---
বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ, ঢিপ ঢিপ, শব্দে নিজেই চমকাই;
চমকাইয়া আবার নিজের শরীলে হাত দিয়া দেহি,  
আছি, না নাই!


রাইতের আন্ধারে বিড়াল হোঁচট খায় আতখা ;
ভাবছি,এই বুঝি আইছো তুমি!
ভাঙ্গে ভুল, যহন দেহি খাটাস ড্যাইকা ওঠে বাড়ির আঙ্গিনায়!   -


এই দ্যেহ ;মাটির ভান্ডে এহনো রইছে চিতই পিঠা,
খেজুরের লালি গুড় দিয়া মুড়ির মোয়া ;
সরায়ে রাখছি-- পিপড়ায় পায়নি নাগাল  --


এই শরীলডারে না;
বুকের মধ্যে যে পানকৌড়ি ডাকে দুফর রাইতে --
হেইডারে জিগাও ;
একবার ছুঁইয়া দ্যাহ; যেমনডি রাইখা গ্যাছিলা ;
ত্যেমনডি আছে পইড়্যা!
কাউরেই দেই নাই। হারায় নাই কিছু ---
তয় ক্যান পরবাসে রাখছো টগবইগা জিয়োল মাছ গর্তের ভেতর?


তোমার বোবা দৃষ্টিতে বড্ড ডর লাগে,
কাঁইপা উঠে পরান আমার!


চেনা মানুষটা কিমুন য্যান অচিন লাগে রাইতের আন্ধারে !
শুধু হাত লারে, পা লারে।
বুকের মইধ্যে পানকৌড়ির গলা চাইপ্পা ধরে।
বড্ড অচেনা লাগে আমার ! বড্ড অচেনা!


ফেব্রুয়ারি, ০৩,২০২২
টরন্টো, কানাডা