জানি জানি হে দেবতা নারীর অন্তর কুঞ্জে
যেদিন তোমার পুষ্প জাগে
মর্মের মলয় তার বিপুল সুরভী কুঞ্জে
আনে বহি মুগ্ধ অনুরাগে।


সে সৌরভ রসে নারী আপনার হারায় নিত্য
বিস্মরয় দোষ গুণ ভেদ
মন মনি মঞ্জুষার পরশ মানিক বিত্ত
তৃপ্ত রাখে শর্বতর খেদ।


সুধীরা পাষাণে গড়া লৌহ দার মর্মপুরে
নিঃশব্দে অর্গল যায় ছুটি
কঠিন প্রাচীর শ্রেণী মৃদুল সোহিনী সুরে
পুষ্পসম পড়ে টুটি টুটি
সেদিন স্বেচ্ছায় নারী সর্বাঙ্গে অধীনতা
চিত্তের আনন্দরাগে দীপ্ত হয়ে সে দিনতা
রানী গৌরব করে দান।


কার লাগি সর্বযুগে সর্ব দেশে কালে নারী
স্নিগ্ধ স্নেহে চির ত্যাগশীলা
পুরুষ পুরুষ মর্মে সিঞ্চিয়া অমৃত বারি
রচে মর্তে অমর্তের লীলা।


আপনারে রিক্ত করে নিঃশেষে করিয়া দান
কেন তার উদ্বেলিত সুখ
সংযমে সেবায় পুণ্যে ক্ষমাই সুন্দর প্রাণ
কি লাগিয়া বিমুগ্ধ উৎসুক।


কে তারে শিখাইল বল মৌন অভিমান লীলা
হাসি অশ্রু ইন্দ্র ধনু জালে
কভু দীপ্ত জ্যোতির্ময়ী কখনো সরলশীলা আরক্ত গোলাপ রাগ গালে।


রহস্য অতল চোখে বিচিত্র চাহনি তীর
অধরে বিচিত্রতর হাসি
কে তারে অজেয়া করি দিল নেত্রে অশ্রুনীর
অমোঘ আয়ুধ রাশি রাশি।


মোর বসন্তের পুষ্প কোন বসন্তের এক
পরিণাম রমণীয় সাঁঝে
সুন্দর মাল্যের রূপে সার্থ
কতা লভিবেক
দুলিয়া ও কম কণ্ঠ মাঝে।


শিহরি উঠিবে চম্পা-বকুল ব্যাকুল চিতে
নিঃশ্বসিবে সুরভি-নিঃশ্বাস
শুক্লা হবে দুখ রাত্রি রজনীগন্ধার গীতে
আছে চিত্তে পরম বিশ্বাস।


হে নিত্য, হে চিররম্য, সুচির নবীন বন্ধু
হে শাশ্বত, সুন্দর পরম
আজিকে তোমার বংশী আমার হৃদয় রন্ধ্রে
তুলেছে তরঙ্গ মনোরম।


আজিকে তোমার বার্তা অপরাজিতার কুঞ্জে
ফুটায়েছে জয় নীল ফুল
অরণ্য-লক্ষ্মীর বক্ষে মালা শোভে পুঞ্জে পুঞ্জে
কর্ণে দোলে সৌরভের দুল।


আবর্তিত ঋতুচক্রে বসন্ত ধরায় নামি
লীলা নৃত্য করে ক্ষণকাল
আমার অন্তরপুরে তুমি জানো অন্তর্যামি
তারি চির মহোৎসব জাল।


উৎসব অঙ্গন পথে যারা নিত্য আসে যায়
আমি খুঁজি তাহাদেরি মাঝ
কোথায় রয়েছ তুমি কার মৌন আঁখিচ্ছায়ে
হে আমার রাজ-অধিরাজ!


শুধু যে তোমারি লাগি যুগে যুগে চিরদিন
রচি নীড় মর্ম মধু দিয়া
নিরুদ্দেশ পথ যাত্রী পান্থ যত লক্ষ্যহীন
যেথায় বিশ্রাম লভে গিয়া।


সবার হৃদয় তলে আমি খুঁজি সত্তা কার
হে নারীর চির অন্বেষিয়
তোমা লাগি রচি নীড়, গাহি গীত, গাথি হার
ওগো প্রেম! আত্মার আত্মীয়।