এইতো সেদিন, আমার মনে পড়ে
এই সেই কৃষ্ণচূড়ার তলে, ঠিক এই স্থানে বসে
আমার হাত দুটি ধরে
বলেছিল সে - টইটম্বুর প্রণয়ের রসে
ভালবাসি তোমায়, বড্ড ভালবাসি।
এ জীবন বৃথা হবে যদি
এক বালিশে না থেকে পোহায় একটিমাত্র নিশি।
তুমিই পারো বহাতে এ হৃদে নিরবধি
সৌদামিনী কলকল,
বাষ্পরূদ্ধ কণ্ঠ থমকে গিয়েছিল আরবার
চক্ষু হয়েছিল ছলছল।
হাতের কারুকাজ করা বালিশের একটি কভার
ধরিয়ে দিয়ে শুধালে, ঘুমিও এটি রেখে তব মাথায়
আমার বুকেই আছো জেনো মনে
স্বপ্ন দেখো দুটি চোখের পাতায়
কোন্ লগনে এমনি করে মিলবে আমার সনে।


আজিকে এ ক্ষণে
বাদল ধারা ঝরছে যেমন করে,
আমি হারা ভালোবাসার রণে
হৃদয় হতে রুধির বুঝি ঝরে।
মনে ভাসে, পিতামাতার শাসন ছিল কড়া
রুদ্র নেশায় ভেঙ্গে বেড়াজাল
হয়েছিলাম তাহার প্রেমের মড়া
প্রেম দিয়েছি খাঁটি, নির্ভেজাল।
মনে পড়ে, বাসর ঘরে দুটি বালিশ ছিল পাশাপাশি
তাই না দেখে অভিমানে বললে কপট রেগে
বিয়ের পরে থাকতে হলে নিবিড়, কাছাকাছি
একটি বালিশ দিতে হবে বলি প্রেমের ত্যাগে।
অদ্য হতে তুমি আমি দুজন
এক বালিশে যাবো নিদ্রা সুখে,
এক ডালেতে যেমন করে কূজন
দুটি পাখি নিত্য সুখে-দুঃখে।


এমনি করে প্রেমের রসে দিন হয়ে যায় গত
মাঝে মধ্যে মুখ দেখি তার কালো,
চাওয়া পাওয়ার ফারাক বাড়ে শত
আমাতে আর পায় না সুখের আলো।
সেদিন দেখি বালিশেতে মুখ লুকিয়ে কাঁদে
আমি এসে বলি সোহাগ ভরে
মনের ব্যথা কইতে আমায় বাঁধে?
শ্রাবণ-মেঘে যেমন বাদল ঝরে
তেমনি বাজে কান্নার করুণ স্বর,
বৈশাখ মাসের তুফানসম দমকে দমকে উঠে
কোন কুক্ষণে তোমায় আমি করেছিলাম আমার স্বয়ম্বর!
তাইতো আজি সুখের পদ্ম কাঁটা হয়ে ফোটে।
ঘাটের মড়া, তোমায় আমি নীরে দিলে ফেলে
ডুবে গিয়ে করো আমার নাশ,
প্রেমের মড়া ডুবে কি আর জলে?
নিত্য ডোবে, নিত্য ভাসে, নিত্য জাগায় আশ।


সন্ধ্যে হয়ে এলো বুঝি, উঠল ডেকে ডাহুক
কন্ঠ তাহার আমার মতো ভার
সাথী তাহার ডাকে না আর কুহুক
সামনে-পিছে, দূরে-কাছে মর্মজ্বালার অথৈ পারাবার।
হৃদয়-দাহ উঠল ভীষণ বেড়ে
দোলা দিল বেগে স্মৃতির ডানা,
হঠাৎ সেদিন আসলে ভীষণ তেড়ে
মারলে ছুড়ে অবাধ ক্রোধে হাতের বালিশ খানা।
হায়! নারী বুঝি এমনতরোই হয়
এক প্রণয়ে খুব বেশি দিন পায় না খুঁজে সুখ,
নিত্য নতুন পাওয়ার তরেই জয়
যে বালিশে প্রণয় বাঁধে, সেই বালিশেই ভাঙ্গে প্রেমের বুক।


কৃষ্ণচূড়ার আগুনে-ফুল সন্ধ্যা-ছায়ায় লাগে কেমন কালো
আমার প্রেমের কৃষ্ণচূড়ার আগ
এমনি করেই হারায় বুঝি তাহার জ্বোনাক-আলো,
মোর জীবনের ফাগুনেরই রাগ
শ্রাবণেরই অঝোর ধারায় অশ্রু হয়ে বর্ষে
আশায় ছিলাম নিশ্চিত করে উঠবে নতুন সূর্য
নতুন দিনে নতুন করে নাচবে হৃদয় হর্ষে
বাজবে প্রেমের রণ জয়ের তূর্য।
কত ভাবে কত রূপে করি আরাধন
ফিরে পেতে তাহার প্রেমের ছায়া,
ততই দূরে গড়ে আবাসন
যতই আমি বাড়াই মনের মায়া।


অন্তর হতে সাধন করলে বাঘের চোখ দেয় ধরা
মনকে বাঁধা নয় তো সহজ অত,
ঘুমের মানুষ ডাকলে যে দেয় সাড়া
জেগে থাকা মানুষ কি আর উঠে ডাকলে শত?
জ্ঞানীজনে কয়-
মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা একই সমান কথা
মন জোড়ান আর মসজিদ জোড়ান পুন্যকর্ম হয়,
মনের মানুষ মন না বুঝলে কে বুঝবে তার ব্যথা?
চন্ডীসম সেদিন প্রিয়া ফুঁসে ভীষণ ভারি
বালিশ দিয়ে মারলে ভীষণ মার
তলোধুনোয় বালিশ-তুলো যত, তুলোর মতো জুড়ল উড়াউড়ি।
বালিশ-প্রহার এমন কি আর ভার?
সহ্য করা নয় তো কঠিন কাজ
শুধু হৃদয়-খানা বাঁধ মানে না হায়!
ভেঙ্গে খানখান তুলোর মতো আজ!
হৃদয় ভেঙ্গে পরাণ বুঝি শূন্যে উড়ে যায়।


তবু জ্ঞানীর বাণীমতো
একটি নতুন বালিশ কিনে প্রেমের তুলো ভরে
প্রিয়ায় কহি, আমার মনে নতুন করে বাঁচবে রাণীমতো
চলো প্রেমে ভাসাই ভেলা পুনঃ, নতুন করে।
গাছের বাকল উঠে গেলে জোড়া লাগে কভু?
কাঁচের বাসন ভেঙ্গে গেলে যেমন
প্রদীপ কি আর পায় ফিরে সেই আলো, হয়ে গেলে নিভু?
আমার চাওয়ায় লাগে যে তার কেমন
ডাঙ্গায় যেমন ঝিমে জলের মাছ,
কহে, তোমায় আর না মনে লাগে
তুমি আমার পাবে না আর কাছ-
উদয়ে নয়, পাবে অস্তরাগে।
রইব আমি তোমার ঘরেই, রইব তোমার সাথে  
জ্বালতে তব মনের আগুন, ঢালতে  শতগুণে  
কাঁটা বুনে তব ফুলেল পথে
যাব আমি বিষাদের জাল বুনে
এ আমারই পরম চাওয়া, মনের গহীন খেয়াল
আজি হতে তোমার আমার মাঝে
কাঁটার মতো বিঁধবে নিতি বালিশের এ দেয়াল
কাটবে তব মনোপিঞ্জর, সকাল-দুপুর-সাঁঝে।।


(ইস্টউড, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
১৮/০৯/২০১৯ বিকাল ৪.২৫টা)