আচ্ছা, নারীরা এত কাঁদতে ভালোবাসে কেন?
আমি উপহাসে জিজ্ঞাসি তাহারে।
নারীর সাথে নীরের আজন্ম সম্পর্ক জেনো,
শীতল কণ্ঠে সে শুধায় আমারে।
এ কেমন কথা! আমি বিস্ময়ে হই বিহবল।
অশ্রু ছলছল চোখ দুটি মেলে ধরে সে আমা পানে
কহে, এ জগতে বিনামূল্যে মিলে শুধু জল,
যেমন নারী মিলে, কড়ি-মূল্য বিহনে।


আমি কহি, নারী-নয়ন এত জল কোথা হতে পায়?
চাইতে না চাইতেই পড়ে অবিরল ঝরে?
কাঠবিড়ালীর মতো চোখ করে সে দেখে আমায়
কহে, দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু নারী দু’চোখে ধরে।
অশ্রু হতে একটি অক্সিজেন পরমাণুও তো লাগে,
আমি ব্যঙ্গ করে তারে বলি।
সে কহে চাঁপা কান্না কোনমতে এনে বাগে,
নারী-হৃদয় একটি মস্তবড় অক্সিজেন পরমাণুর থলি।


দুটি পরমাণু হতে অক্সিজেন অণুও তো যায় পাওয়া?
জীবনের তরে যা ভীষণ দামী?
যেন স্থির পালে লাগে দমকা হাওয়া,
অধর বাঁকিয়ে কহে, নীরও তো জীবন-দানী!
অনুঘটক হিসেবে যদি মিলে অনুরাগ-বল,
নারীমনে মিলে দুটি অক্সিজেন পরমাণু।
আর হাইড্রোজেনসাথে মিলে গড়ে নয়ন-জল,
অনুঘটক হয়ে যদি আসে বিরাগ-রেণু।


আমি কহি, ধরনীতে তিনের দুভাগ আছে শুধু জল,
জলের মূল্য এইখানেই যায় বোঝা।
শুনে তার অসহায় চোখ দুটি করে টলমল,
কহে, এ কথার মানে তো অতীব সোজা।
এ সকল জলের দুভাগ শুধু স্বাদু,
বাকী জলে যায় কি ফসল বোনা?
তাই দুভাগ অশ্রুতে আছে শুধু যাদু!
বাকী অশ্রু সব অকেজো আর লোনা।


আমি কহি, একটু ব্যাখ্যা করে বলতো শুনি।
সে কহে অতীব বিষন্ন বদনে,
দুভাগ জল নরের চোখের মনি,
যা কদাচিৎ বহে অমূল্য রোদনে।
নারীর চোখের জল তাই আদ্যোপান্ত লোনা,
অপচয়ে যার কোন আসে না বিকার,
এ তুচ্ছ উদকে ফলে কি আর সোনা?
লোনা-কান্না নারীর তাই একচ্ছত্র অধিকার।


আমি কহি, এ নারীর অভিমানী কথা।
নারী শুধু তরলই নয়, কঠিনও হয় বটে।
সে কহে, বারিও কভু নিয়ে আসে কঠিনের বারতা!
এখানেও নারীর সাথে নীরের ত্রিমলন ঘটে।
আমি শুনে চমকে যাই, থমকে যায় সহসা মুখের ভাষা।
কহে, স্বাভাবিক জীবনে নারী নীরের মত
উপর হতে নিঁচুতে বহে খাসা,
উষ্ণতা বিহনে নারী বরফসম জমে অবিরত।


নারীর আরেক জলীয় রূপ?
আমি চরম উৎসুক হই জানতে।
কহে, অতি তাপে নারী বাষ্পসম ধূপ,
শত রোদনেও পয় জমে না আঁখি-প্রান্তে।
জন্মে নারী স্বজন- নেত্রে বহিয়ে জলের ধারা,
মাঝে অশ্রু-বাঁধে বাসে
আর! অশ্রু-নদে ভাসে
অশ্রু-মাঝেই টানে জলমগ্ন ব্যর্থ জীবনের সারা।


ইস্টউড, সিডনী, অস্ট্রেলিয়া। ৮/১০/২০১৯ খ্রি, বিকাল ৪.২৩টা