বন্ধু প্রিয়াকে , হারানো বেথায় আমার মনের প্রকাশিত এই চিঠি।
( লতাবানু ) নিজের কাছে লেখা আমার এই চিঠি ।
জাফরপুর , ইব্রাহিমপুর, নবীনগর এর মাঝেই আমার পরিচয় ।
আকাশের জ্যোৎস্নার রাতে আমার লেখা কবিতাটি ।


   প্রিয় 'লতাবানু' আমার ,


গতকাল রাতে এসেছি বাড়িতে । জাফরপুর গ্রামেই আছি । রাস্তায় গাড়ি
সমস্যার কারনে দেরি হয়েছে । তবে কোন সমস্যা হয়নি । বেশি দিন এখানে থাকা হবে না । মনের এই চঞ্চলমুখি যত প্রশ্নের মুখোমুখি ।
কোথাও গিয়ে স্থির করতে পারছি না 'কিজে হারা ' মানুষের মন বলে । মনে কেবল একলা থাকতে চায় । কোথায় পাব সেই ঠিকানা । তোমার কাছে থাকলে আমায় খবর দিও । ঠিক করতে পারছি নে চিন্তায় মশগুল । সন্ধান পাওয়ার সাথে সাথেই যেন দূরে কাছে অথবা ফিরে না আশার কোথাও চলে যাব হঠাৎ । তবে কেউ জানুক বা নাই জানুক , তুমি খবর পাবে । প্রিয় লতাবানু , তুমি আমার খেলার সাথি । জ্যোৎস্না ছড়ানো আলো । যে সময় পৃথিবীর সব আমাকে ভুলে যাবে সেদিন তুমি আমার পথ না চেনার আলো দিবে অন্ধকারে । তোমার সাজানো সংসার যেখানে আদরে আমাকে ভালবেসেছিল । তার এই স্মৃতিগুলো যেন পথের যাত্রী হবে আমার দুঃখসময়ের পথ চলার । তাই যেন আমার অসময়ের পরম বন্ধু পাওয়ার আনন্দ । এই কি কম পাওয়া আমার ।
                             এ কথা তোমাকে লেখার মাঝে আমার অনেক উদ্দেশ্য । বন্ধু আমি পেয়েছি , পৃথিবীর বুকে যার কথাতে পরিচয় । তুলনায় যেন এর কমতি নেই । এ সকল চোখে দেখানো সমাজ গড়ার বন্ধু । আনন্দ উল্লাসে , আশায় মিছিলের , রাজনৈতিক বন্ধু । এরা অনেকেই আমার প্রতিবেশী হয়েছে । গ্রামের চেনা জানার মাঝেই এদের বাড়ি ঘর ।
        আমার জীবনের দুঃখের কথাগুলো শুধো নয় , মনের গভীর কথাগুলোও তোমাকে লিখে গেলাম ।
         নদীর পথে চলায় সাগরের মাঝে যেখানে ঢেউয়েরা খেলা করবে , মনে কর - সেই ঢেউয়ে আমার নাচ ধরা মন --।
                         আমার জন্যেই তাকে মনে রেখ স্মৃতিতে ।
মৃত্যু এখন আমার এক মাত্র পথ বলে , জীবনের মতন সুন্দর নিজেকে নিয়ে সাজানো । মনে হচ্ছে জীবনে যে আমার থেকে দূরে মরলে বুধ হয় কাছে চলে আসবে । সুখ -দুঃখ সবটাই মনের চলার সাথি । বেথার মাঝে যত কথার প্রশ্ন এখানে শান্তি ফিরে পাব । তোমার কথা মনে পরে আমার ভাবনার যেন শেষ নেই ।
ভাবছি আমার জীবনের মুহূর্তগুলো যে বদলিয়ে সুখ থেকে দুঃখে পরিনত করেন সে বোধহয় জীবন দাতা । তবে আমি রফিক হলেও জীবন দাতার কাছে জীবনের সুখের শান্তির খুঁজে আর দু'হাত তুলে ভিক্ষা চাইব না । এরকম কথা আমি বলছি না ।
গাছের ফল নষ্ট হয় কারনে অকারনে আবহাওয়ার জন্যে যা সে নিজেও জানে না । না হয় পানিতে ডুবে সে নীরবে পচে গেল । তাই বলে তাকে রাগের মাথায় কেটে ফেলাটা কোন মনের বিচার ভাই ।
                      অহংকারের অবহেলা আমি শইতে পারিনা বন্ধু । তাই আমার এত কষ্ট । কষ্টের জীবনে কেউ যদি সুখ খুঁজতে চাই তাকে দুঃখের পথ দেখিয় না । মজা করার একটা সীমা আছে । তবে অতিক্রম করলে তার আরও গভীর হয়ে আসে । আর দুঃখ তার পরিচয় পদত্যাগের জীবনধারা ।
               শিশুকাল থেকেই গ্রামে আমার বড় হওয়া । যার সারাদিন কেটেছে অশিক্ষিত লেখা পরা না জানা কৃষকের সাথে ধানক্ষেতের কাদায় । যাদের মনে ভালবাসার কোন কমতি ছিল না । তবে নিজেকে ধরে রাখার ক্ষমতা ছিল না ।
             সময়ের অভাবে এবার অনেকটা কষ্টের লেখা চিঠি । কি করব বল কষ্টেই যেন আমার জীবন । মন কান্নায় যেন জ্বলে গেছে । সুখের সন্ধান পায় না আর খুঁজার চেষ্টাও করি না বেস্ততায় -- ।
             আমার সবচেয়ে আশচর্য মনে হয় নদী পৃথিবীর মানুষের মন । আমি পৃথিবীর প্রায় সব মনকে চিনে ফেলেছি । রূপে গুনে তাদের নাম মিলাতে পারি না । তবে মনের তালিকায় ভুলে না যাওয়ার রুপের আঁকার একেছি ছবির মতন । কত রকম আঁকা নাম মোটা , মাথা ছোট, যেভাবে আমি চিনি দেখে তুমি খাসবে । কোন মনে কোন দিনে কি চায় সব বলে দিতে পারব । তাইত গ্রামের অনেকেই আমাকে সন্ন্যাসী তন্ময় বলে ডাকে । আমি যখন অসুস্থ হয়েছিলাম তখন অবসরে অসুস্থ শরীর নিয়ে এসব মনের ছবি আকতাম । আর সেই ছবিতে খাত ভুলিয়ে বলতাম তোমাদের মনে পৃথিবীর সকলে মিলে আমাকে এই দুঃখের খবর জানিয়ে দাও পথের ব্যানারের মাঝে সেজে । রাস্তায় পরে থাকা প্রতিটি ছায়া । আর আঁকা হয়ে থাকা দেহের প্রতিটি জোরায় যার কোন সন্ধান মেলেনা ।
             আচ্ছা বন্ধু , একটি মনে কতরকম জীবন বসবাস করে তোমাদের দুঃখ দেওয়া প্রেমই তা বলতে পারে নিঃসন্দেহে । এখন কেবল প্রশ্ন মনে খেলা করে জানার ইচ্ছায় মন । যার কোন উওরের সমাধানয় তোমার কাছে নেই ।
             যেদিন আমি নদীর ওপারে চলে যাব চিঠিতে লিখে জানালাম সে যেন আমার জন্যে নদীর পারে বসে তাকিয়ে থাকে অপেক্ষায় একটু একমনের মুহূর্তে । সেই আনন্দে আমি নদীতে পরা চাঁদের খাশিতে সেজে নাচব । তার উদ্দেশ্য দূরে কোথাও লুকিয়ে আমি মনের বসতবারিতে । একটি ফুলের বাগান প্রেমের জন্যে বানিয়ে রাখব ।
           আমি যেন দেখতে পায় শিশিরের কুয়াশায় ফুল ফোটানো সৌন্দর্য একটুখানি পরিবর্তন হয়েছে । যা দেখে আমার বেস্ততার সময়টুকু কেটে যাবে ।
            কলমের কালি শেষ হয়ে গেছে । রাতের খাবার শেষে আবার লিখতে গেলে যেন সব ভুলে গেছি দুঃখ ভরা কান্নায় খাতার পাতাও শেষ । বাড়ির সবাইকে নিয়ে কেমন আছ সব কথা নিয়ে আমাকে জানায়ও । সকল কষ্টের মাঝে যেন দাদির কথা ভুলে গেছি তোমার লেখা চিঠি পেয়ে সে অনেক খুশি । তোমাকে নিয়ে তার একটি কবিতাও আছে এখন তোমাকে বলার সময়টুকু মাত্র ---।
                 গ্রামের সবকিছুই যেন বদলে গেছে । বদলে গেছে নদীর পারের গাছের নীচে বসা জায়গাটি । সেখানে আজ জমিদার বাড়ির বরদের তাস খেলার জায়গা । রাতের প্রায় শেষ হারিকেনের তৈল ও শেষ হয়ে এসেছে । এতটুকুর মাঝে যা লিখলাম তার লেখাতে আমারে জানায়ও । সবাইকে নিয়ে তুমি ভাল থেক । এই বলে আমার লেখা শেষ করলাম ।
                       ইতি তোমার হারিয়ে নয় ভুলে রেখে যাওয়া
                                         ' রফিক '