এমনই এক দিনে ১০ই ফাল্গুনে, ধরিয়া বাম হাত খানি
বাবা বলিলেন,
“মাগো,
বলবো যা, শুনে  তা,  কষ্ট পাবে জানি।“
দক্ষিণা হাওয়া, স্বর্ণ বর্ণ চুলে ধাওয়া, উছলাইয়া উঠিল মন,
বাবা তো জীবনে, কারণে বা অকারণে, কথা যে বলেন না এমন।
তাকাইয়া দেখি, শাসনের চোখ একি,
সমুদ্র জল টলমল,
হাতখানা তারি, হইয়াছে ভারি, কেমনে তাহা ছাড়ি, পাছে না লুটায় ভুতল।
সহসা শূন‍্য গগন পানে, চাহিয়া দু নয়নে,
লুকাইলেন বাবা আঁখি জল।
বলিলেন,
“মাগো,
বিশটি বছর ধরে, কোলে পিঠে ক’রে, স্নেহ মায়া মমতা ভরে, কন‍্যা আমার ওরে, কি বাঁধনে বেধেছি তোরে?
ছোট্ট সে শিশু বড় যে হলি কবে, পাত্র এসেছে ঘরে,
তোমারই বিবাহের ত্বরে।“


মনে পড়ে বাছা, সেই যে আসিলাম, এইখানে, তিরিশ বছর আগে।
আজও সেই বাড়ী, বিবাহের রক্ত লাল শাড়ি, মাহিনের বাবার গাড়ি, যমুনার বালুচর পাড়ি, কেন যে নতুন লাগে।


ওরে বাছাধন, সবই যে মোর তুই এখন, কেমনে বুঝাই তোরে,
কেন যে আমি বসিয়া থাকি, তোর বাবার কবরে।
নাম ছিল মোর তিতলি বেগম, তোর বাবা বলিল এ নাম কেমন,
তোমারে ডাকিব “আলো।“
বলিলাম আমি, ওগো প্রাণ স্বামী, ডাকো না তুমি,
যে নামে লাগে ভালো।


অসুস্থ শরীরে, একদিন সকালে, নাস্তা দিতে তোরে, হইয়াছে একটু দেরি।
রাগে ক্ষোভে তেড়ে, গেল সে বাহিরে, দেরিতে ফিরিল বাড়ি।
“সারাদিন কিছু কি খাইলে, বলিতেই ওরে, ক্ষেপিয়া উঠিল হেরে।“
“সে খবর কেন, জগৎ সংসার যেন, কেবলই তোমারই পিছু ফেরে!”


আরো কত কথা, কত যে অপারগতা, কত সব সফলতা, সবই যে আঁস্তাকুড়ে।
আমি বসে থাকি, যদি ওঠে ডাকি,
“আলো, আলো, আলো...
শুনতে পাও না নাকি?
এমন সময় কেউ, বাহিরে কি থাকে?
সন্ধ‍্যা হইল,
জানালা বন্ধ করো, খোকা মোর ভয় পাইবে,
শেয়াল উঠিবে হাঁকি।“
কত লোক যায়, কত কথা হেথায়, বিশ্ব ব্রহ্মান্ড খবরে।
তোর বাবা কেবল নিশ্চুপ থাকে,
শুইয়া উঠোনের কবরে।
অভিমানী ওরে, একেলা ফেলিয়া মোরে, চলিয়া যাইবে যদি,
কেন ডাকিলে আলো, কেন বাসিলে ভালো, কেন যে হেরিলে হৃদি।
কেন এ জীবন কি তার মানে,
কেনই বা এতো সম্পদ লাগে, ভাবিয়া না পাই কুল।
মায়ার  এ জীবন, মায়ার এ বাঁধন, আসলে সবই তা ভুল।