“আমি থাকি খালে বিলে, তুমি থাক ডালে / দুজনার দেখা হবে, মরণরে কালে”
এটি একটি লোকজ ধাঁধা । লোকসাহিত্যের এ অনন্য অঙ্গটিতে সমাজ সংসারের নানা চিত্র উপস্হাপিত হয়ে থাকে। যা যুগোপৎ আমাদের আনন্দ, চিন্তা ও বোধের উৎকর্ষ সাধনে খোরাক যোগিয়ে থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এ ধাঁধাগুলোর অর্থও বহুমুখী হয়ে থাকে। সে যাই হোক আদার ব্যাপারী ধাঁধার খবর না নিয়ে নিচে প্রদত্ব কাবতাটি পাঠ করি।


“ঝড়ের সামনে যে গাছগুলো
মাথা নোয়াবে না বলে ভেবেছিল,
তছনছ হয়েছে তারাই; ঠকেছে তারাই, সব্বার আগে।
দেখো সূর্যটাও অবিচল নয়!
কখনো উত্তরে, কখনো বা দক্ষিণায়নে
নিজেদের জেদটাকে আঁকড়ে ধরে থকে কি পেলাম আমরা?
কতটা হারিয়েছি, ভেবেছ কি একবার!
তারচেয়ে বরং এসো না আর একবার চেষ্টা করি; নতুন করে…”


কবি সমীর প্রামাণিক (অন্বরীষ কবি) এর কবিতাটি সরল পাঠে দেখা যায়, কবি আমাদের চেনাচানা সহজ ভাষায় তাঁর একান্তজনকে দুটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে কিছু বলেতে চেয়ে আহবান করেন, “তারচেয়ে বরং এসো না আর একবার চেষ্টা করি; নতুন করে…”। কাবতাটি ভাষায় সরল কিন্তু ভাবে গভীর। এবার নিবিষ্ট পাঠে কবি কি বলতে চেয়ে মত বদলের ডাক দিয়েছেন তা-ই আমরা বুঝতে চাইব। তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে অন্ধের হাতি দেখার মতো কবির মূল ভাবকে ছুঁয়েদিতে প্রয়াসী হব।


এক)

বাস্তববাদী এ কবি চলমান সমাজ, সামাজিক সম্পর্ক,পারস্পরিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতা নিবিড় ভাবে অবলোকন করেছেন। তনি দেখেছেন আমরা কেউ ডানে যাচ্ছি, তো কেউ আবার বামে যাচ্ছি। কেউ ছাঁড় দিতে চাচ্ছি না। পন্থা চরম, ভাঙবো কিন্তু মচকাব না! তিনি এর অবসান চান। তাই দুটি অতিপরিচিত দৃষ্টান্ত উপস্হাপন করে বলেন,
“ঝড়ের সামনে যে গাছগুলো
মাথা নোয়াবে না বলে ভেবেছিল,
তছনছ হয়েছে তারাই; ঠকেছে তারাই, সব্বার আগে।
দেখো সূর্যটাও অবিচল নয়!”


অর্থাৎ ঝড়ে অনড় থাকতে চাওয়া গাছগুলোই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সূর্যও স্হির থাকতে পারে না। আমাদের সুখের জন্যই সমঝতা করা দরকার। সুতরাং আমাদের উচিত মত বদলে নতুন করে এক হয়ে চলা।কাছাকাছি এসে পরমত সহিষ্ণু হওয়া। ঐক্য গড়া। নয়তো এ সমাজ- সংসার সব ভেঙে যাবে।


দুই)


কবি তাঁর একান্তজনদের ডেকে বলেন, দেখ; আমরা কেউ বামপন্থি হচ্ছি, কেউ ডানদিকে ঝুঁকে পড়ছি। মূল পন্থা থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। মহান যে শক্তি তাঁর থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ছি। চল অনড় না থেকে মত বদলে মহান শক্তির সামনে মাথা নত করি। তা নাহলে সামনে বিপদ আছে। চরমভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে কষ্টে অনন্তকাল কাটাতে হবে।


তিন)


অত ঘাড় ত্যাড়ামি কইর না! ঘেটি ভাইঙ্গা যাইব। কানা কনেকার, দ্যাখো না শক্ত-পোক্ত বড়বড় গাছগুলানের মাথা ঝড়-তুফানে ক্যামনে ভাইঙ্গা ফেলায়। তবু হেতে অটল থাকবার চায়! আরে এত যে তেজাল সুরুজ, হে ওতো স্থির থাকতে পারে না। লও মত পাল্টাই। ডাইনে বাঁয়ে ঘুইরা কাম নাই। যেদিকের মেঘ সেদিকে ছাতা ধরি। অত যে মেরুদন্ড খাড়া কইরা রাখলাম, কি পাইছি?  আমি মত বদল কইরাই তোমারে ডাকছি। আরে এখনকার ফ্যাশান সুবিধাবাদ জিন্দাবাদ! লও ক্ষমতার পদলেহন করি! ভাল থাকবা। নাইলে দেখবা লাত্থি-গুঁতা মাইরা, চালে-জালে ফেলাইয়া, বোমা-টোমায় পুড়াইয়া মিসমার কইরা ফেলাইবো। মত বদলাও! মত বদলাও!


প্রিয়কবি আপনিও কি তৃতীয় মতটা বিশ্বাস করেন?


প্রিয় পাঠক, কোন মতটা পাল্টাবেন, ভাবুন। আর লোকজ ধাঁধার সমাধান আপনাদের জন্যই তোলা রইল।


কবিতাটির নামকরণ অর্থবহ । তৃতীয় মতটি যদি কবির বিশ্বাস না হয়ে থাকে তো ঝড়ে মাথা নোয়ানোর ব্যাপারটা ভেবে দেখতে পারেন।


অল্পকটি কথার এ কবিতায় এমন বহুমূখী ভাবব্যাঞ্জনা ফুটিয়ে তোলার জন্য কবিকে শুভেচ্ছা।


বি:দ্র: কনেকার> কোথাকার, হেতে> সে, ঘুইরা >ঘোরে।