প্রতিমা মল্লিক :-(সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত)
ডাক্তার ‘রাম-রাজা’ জিজ্ঞেস করলেন:
প্রশ্ন: তোমার নাম কি?
উত্তর: প্রতিমা মল্লিক।
প্রশ্ন:স্বামীর নাম?
উত্তর:আনন্দ অ্যাল‌বার্ট্।
প্রশ্ন:কী বললে? আনন্দ অ্যালবার্ট্?
উত্তর:আজ্ঞে হ্যাঁ।
প্রশ্ন: তার মানে খৃস্টান! স্বামী কী করেন?
উত্তর: চার্চের পাদ্রী।
প্রশ্ন: শাঁখা সিঁদুর প’রে আছো,
       তুমি তো হিন্দুই দেখছি---
       অথচ খৃস্টানকেই বিয়ে করেছ?
উত্তর: আমার স্বামী আমার সংস্কারে বাধা দেননি;
         তা’ছাড়া তিনি বাঙালি।
         বাংলা আমাদের মাতৃভাষা!
প্রশ্ন: বেশ! তা’ বাঙালির কাজ কী করো?
উত্তর: আমার স্বামী বাংলা ভাষায় কবিতা লেখেন,
         সঙ্গীত রচনা শুধু নয়,
         স্বকন্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন,
         কখনও বংশী হাতে মুরলীধারী,
         কখনও যাত্রাপালায় রাজা হরিশ্চন্দ্র,
         কর্মক্ষেত্রে অল্ সেন্টস্ চার্চের ফাদার।
         আমার স্বামীর গুণের সীমা নেই।
প্রশ্ন: তোমার এ অসহায়তার কারণ?
উত্তর: অসহায়তা তো নয়। আমি স্বেচ্ছায় বরণ করেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু তুমি তো হিন্দু---হিন্দুত্ব ছেড়ে
      ওসব ছি: ছি: ছি:---
উত্তর: আমার স্বামী একজন ভাল মানুষ---
        এটাই তাঁর প্রথম ও শেষ পরিচয়!
ডাক্তার : (রাম-রাজা) আচ্ছা, আচ্ছা---
         তোমার শারীরিক  সমস্যার কথা বলো:
        এই,ওষুধ লিখে দিলাম---
        সকাল-বিকাল একটা ক’রে ক্যাপসুল্।.......


আনন্দ অ্যালবার্ট একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে
এসব কথা শুনছিলেন।
অল্ সেন্টস্ চার্চের ফাদার ব’লেই
তাঁর বেশ সুখ্যাতি আছে
খৃস্টীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত
এই মানুষটি কখনও কারও ধর্মবিশ্বাসকে
খাটো ক’রে দেখেননি।
কখনও হরি-সংকীর্তনের আসরে
গায়ক অথবা বংশীবাদকের ভূমিকায়,
রবীন্দ্র-নজরুল স্মরণ-সভায় বক্তা,
২১ শে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহিদ স্মরণে
সাংস্কৃতিক মঞ্চে আবৃত্তিকার,
এক নির্ভীক সত্যানুসারী মানুষের প্রকাশ।
কবি-শিল্পী আনন্দ সযত্নে এসব
লালন ক’রে এসেছে এতদিন
তাঁর প্রশস্ত হৃদয়-মন্দিরে।
প্রার্থনা করেছে সব মানুষের জন্য
ঈশ্বরের কাছে—‘মুক্ত করো হে চির সুন্দর!’
কিন্তু আজ কেন এমন হ’ল?
আনন্দ’র মনে প্রশ্ন জাগে:
‘শাঁখা-সিঁদুর পরলে হিন্দু হয়,
আর না পরলে জাত যায়,ধর্ম যায়---
এমন কথা আজ আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?’
ডাক্তাররা তো নব্য মানবতার কথা শোনাবেন।
প্রচলিত ধর্মীয় সীমারেখার মধ্যে
তাঁরা আবদ্ধ থাকবেন কেন?
তাহলে  আমিই কি ভুল করছি?
হে করুণাময়,হে সর্বশক্তিমান
তুমি ব’লে দাও---
প্রতিমা-আনন্দ’র আঁধার ঘরে
যে শিশু-পুত্রটি আলো হয়ে জন্ম নিল
তার পরিচয় তবে কী হবে??