তোমাদের ১৪০০ সাল
----
রমেন মজুমদার 07/09/23
---
কবিগুরু,কবি নজরুল কী লিখিলে,
তোমাদের শত বর্ষ পরে!
আজি হ’তে শত বর্ষ আগে!--
করেছিলে স্মরণ মোদের
আপনার করে---
নম্র মনের আকুতি ভরে;
আমাদের জন্য কত অনুরাগে,
আজি হতে শত বর্ষ আগে।।

কবি,কবিন্দ্র ওহে মহামতি!
প্রণত চিত্তে আজ জানাই আকুতি;-
হৃদখানি খুলে দিয়ে প্রেমের মুরতি
আমাদের করুণ ব্যথার কত শত ক্ষতি
কী করে বলি গুরু বুক খানি ভরে
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

ছিল সে রঙ্গিন দিন,
দিলে কী করুণার ঋণ!
বসন্ত নিংড়ায়ে হেথা,দিলে ভরে কাব্যকথা
সে এক মোহিতের--গুঞ্জন বীণ!
করিয়া নত মাথা,
পড়ে নেই সব কথা
অন্তরে ভরে,
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

কোথা সেই দখিনা পবন,মন করে উচাটন;
বাতায়ন খুলে দেখি সুগন্ধ উধাউ..
অনাগত আজ মোরা,
ঋতুতে দেখি খরা!
হৃদকোণে অনাহারে ক্ষুধাজ্বলে দাউ দাউ!!
কী সেই বার্তা লয়ে,
জ্বালি দীপ অন্ত হিয়ে;
ভবিষ্য প্রজন্ম তরে...
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

দখিনা পবনে বিষ,
খুলে না ফসলের শীষ!
তোমাদের মমতা গুলি হইতেছে শেষ!
পৃথিবী ব্যপীয়া আজ,
সাজিয়াছে যুদ্ধের সাজ!
পড়িতেছে কত শত বোমা!
হিংসা আর হানাহানি, স্বার্থ নিয়ে টানাটানি;
করিতেছে খেলাটুকু নিজেদের তরে;
তোমাদের শত বর্ষ পরে!!

আনমনা প্রজাপতি,
তাহাদের পাখায় আর্তি!
বিষণ্ণ-বেদনা লয়ে কোথা উড়ে বসে ?
বাতায়ন দখিন দুয়ার,
বাতাবির নাই সমাহার;
শতদল পুষ্কুরিণীর পার যায় খসে!
নেহারি বেদনা-উজ্জ্বল আঁখি বারি ঝরে
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

আজি মোরা শত বর্ষ পরে,
লিখিতেছি কবিতাগুচ্ছ যে যার করে;
হৃদে ব্যথা হু হু করে!
সাজাই কবিতা বাসরে;
তবুও পাইনা সেই সুকোমল সুরে...
শিথিল-নয়নে ঝরে,
অশ্রুধারা ঘরে ঘরে!
ক্ষুধার্ত নিরীহ প্রাণ পথ-ঘাট ভরে!
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

পড়েছি তোমাদের কবিতা খানি;
কী মায়া মধুর বাণী ;
সেই দিন-সেই সুখ;
জাগিতেছে মনে...
সানন্দ  প্রাণে ব্যথা! কর্মহীন যথাতথা;
ঘরে ঘরে বেকারের কী করুণ কাহিনী!!
হে রবি,হে নজরুল বুঝাই কি করে?
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

দক্ষিণের রুদ্ধ বাতায়ন পরে,
খুলে যায় বারে বারে----
মন-মরা বসন্তের ঝির ঝির বায়ু ;
ঝরে পাতা কঁচি বৃক্ষে!
আত্ম প্রাণ কে কার পক্ষে?
দিন দিন ভেজালে মরিতেছে আয়ু!!
বেণী-খসা কবরীর অশ্রুজল মৃত্তিকায় ঝরে!
তোমাদের শত বর্ষ পরে।

আজি হতে শত বর্ষ আগে,
আর সাত বর্ষ পরে....
দিনরাত ব্যবধান!
উবে গেছে আত্মসম্মান!
মাধুপের মুখ খানি গিয়াছে শুকায়ে!
বকুলের ডালে বসি,কপোতের চষ্ণুপুট
দেয় কপোতিরে--
গেছে সে উচ্ছ্বাস হিয়া নিভে চিরতরে!
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

কোথা সেই কিংশুক বসন,
নববধূ করে কি যতন ?
--সেই আগের মতন;
দু'মুষ্টি ভাতের জ্বালা !
কাজ করে বাড়ি বাড়ি করিয়া সে পালা!!
পড়নে জীর্ণ কাপড়!
ক্ষুধা বুকে কাঁপে হাফর!!
দেখি আজ হাহাকার কতশত ঘরে,
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

তোমাদের শত বর্ষ পরে
পড়িলাম কবিতা দুটি ১৪০০ সাল ধীরে;
মদালসা-ফাগুনের গুণকীর্তন খানি
সযতন করে;
কী সেই চাতুরী প্রাণ!
অবজ্ঞা নহে অভিমান;
হৃদয় উগরী করি, সুচিত্ত ভরে;---
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

আমাদের পরে যারা,লইবে জনমে ধরা;
আসিয়া ক্ষুধাতুর বেশে !
রঙ্গিলা স্বপ্নের ভূমে,
দুনিয়া নেটের ঘুমে
মজিয়া রহিছে যেন আধমরা হয়ে!!
কোথা সেই কোকিলের ডাক!
হারায়ে গেছে যে বেবাক!!
অনাগত অনাহারে!
কর্মক্ষীণ লইবে জনম!
আতুরের ঘরে---
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

আজিকার যত ফুল,যত গান;
হারায়ে গেছে সেই দান!
দুর্বল চিত্ত খানি জাগিবে কি করে ?
তোমাদের আশিস বাণী;
রেখেছি যতন করে;
আমাদের সুচিত্তে ভরে!
তবু দেখি অবৈধ বাণিজ্য পৃথি!
গাহে গুণী ইতি-উতি ভুলায়ে সকলের মন
আপনার করে,
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

আজি নব-বসন্তের প্রভাত-বেলায়,
ফুঁটে না রে কলি সুখ যৌবন মেলায়!
রঙ্গিলা স্বপন চোখে,
অনাহুত দেখি রাতে
কত জননীর কোল হইতেছে খালি!
রাজপথ রঞ্জিত রক্তে!
পড়িতেছে ফালি ফালি লাশের বহর!!
কোথা সেই মাধবী বাসর!
গাঁয়ে গাঁয়ে বাঁধে না আসর গীত সুরকারে
তোমাদের শত বর্ষ পরে।।

তবু মনে বাঁধি সুখ,
অপূর্ণের জ্বালি ধুপ!
চুপি চুপি কবে কবি আসিবে ধরায় ?
তোমাদের বসন্তের গান,
রয়েছে,-- হয়ে সে অম্লান!
তীব্র কণ্ঠে করে যাই তারি গুণগান...
আজি হতে শত বর্ষ আগে, হে কবি !
তোমাদের লেখনীর কাছে করি মাথা নত
প্রণত চিত্ত খানি ভরে,
আজি হতে শত বর্ষ আগে ও পরে।।
-----
সমাপ্ত, হরিদেবপুর।।