মহররমের সন্ধ্যায় দেখি অস্ত গগন জুড়ে
অরুণের রঙে রাঙিয়াছে ধরণী অথৈ বিষাদ ঘিরে।
অদূরের তরু বন ছায়ার মতো নিশ্চূপ দাঁড়িয়ে হায়,
রঙিন ভুষণ ছেড়ে দিয়ে তার আঁধার মেখেছে গায়।
কমলের বন ভুলেছে ভ্রমর, ভুলেছে সুরভী তার,
বাংলার কূলে ফোরাতের ঢেউ আজ ভাঙে বারে বার।
তারই সাথে আসে ব্যথার সলীল হৃদয়ের বালুতটে,
বারে বারে হানে যন্ত্রণা-ঘাত নিদারুণ অকপটে।
স্রোত সে প্রবল নিষ্টুর বলে দূ` কূল করেছে ক্ষয়,
ফোরাতের কূলে মরু বালি কাঁদে, ফোরাত রক্তময়।
ও নহে শুধু ফোরাতের জল, অশ্রু সলীল তার;
আঁখির সলীলে ভেসেছে আজও বিশ্ব পারাবার।
আকাশে বরুন আগুনসম কিরণ ছড়িয়ে তার
ধরণী মাতারে জানিয়ে দিলো হৃদয় ব্যথার ভার।
ব্যথায় ব্যথায় পূর্ণ হৃদয় সইতে নারে পারি,
অনল কিরণ ছলে করে তাই বুকফাটা রোনাজারী।
চঞ্চল দিন গম্ভীর হয়ে শোকের আবেশ আসে,
শাঁখার পল্লব ঝরলো নীরবে ব্যথার দীর্ঘশ্বাসে।
সন্ধ্যা লগনে গগনে লালিমা আরও যেন লাল হয়ে
লহুর তুঁলিতে বেদনার ছবি একেঁছে আকাশ গায়ে।
বিহগেরা সব নীড়ে না ফিরে বসে শাঁখের `পর
শোক-গীতি গাঁয় কেঁদে কেঁদে, হৃদয় ঝর ঝর।
থমকে দাঁড়ায় শুনে সে সুর চির বহতা নদী।
হাজার বৎসরী সঞ্চিত ব্যথা আজও বহে নিরবধি।
মলিন বদন আধঁখানা চাঁদ চন্দ্রালোকের ছলে
আনলো খবর বিয়োগ ব্যথার ফের মনের আঙন তলে।
হৃদয় নিঙরে হাহাকার করে শুধু অতল শূন্যতা,
শত কোঠি অন্তর পুড়ে নিরন্তর, ব্যথায় পূর্ণ তা।
আঁখির অশ্রুয় হয় কি নিবারণ ব্যথার বহ্নি শিখা?
দিন যতো হয় গত বাড়ে ততো হৃদয়ের ব্যাকুলতা।
মরুর হাওয়ায় এসেছে আবার কারবালা পয়গাম,
গগন-ভুবন বিদারণ-বিধুর; শহীদি যতো নাম,
হোসেনেরে আজ পড়ে মনে— কারবালা প্রান্তর
আজও সেদিনের স্মৃতির অনলে পুড়েছে নিরন্তর।


                                                               (সংক্ষেপিত)