হঠাৎ অন্ধকার!
বিদ্যুৎ চলে যায়নি, ডুবে যায়নি সূর্য,
প্রবেশ করিনি দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখা কোনো ঘরে।
নিভিয়ে দেইনি জ্বেলে রাখা একটি মাত্র প্রদীপ
কিংবা আগমন ঘটেনি রাতের।
তবু ঘোর অন্ধকার!
অন্ধকারে পৃথিবীর সমস্ত ভালোমন্দ নিমেষেই একাকার।
উঁচু নেই নিচু নেই, শোষণের চিহ্ন নেই, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই।
ভালোবাসার যে রঙ বেদনায় মিশে গিয়ে নীল হয়ে যেতো,
তাও নেই।
এ যেন অন্য এক পৃথিবী!
দেখি ঘোর অন্ধকারে শোষিত মানুষগুলো-
অপ্রাপ্তির সমস্ত বেদনা ভুলে ফিরে দাঁড়ালো।
অন্ধকারে অক্ষরগুলো অচেনা হয়েছে বলে-
অর্থের খুঁজে কেউ আর ঘুরে ফিরেনা ভিক্ষাবৃত্তির মতো।
মেতে উঠেনা অধিকার নিয়ে রক্ত ঝরানোর নগ্ন হলিখেলায়।
মানুষগুলো যেন আজ সত্যিই মানুষ!
বিবেকের দরজায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে-
ভালোবাসার সুভ্রতায় জ্বলজ্বল করা মনুষ্যত্বের গোলাপ নিয়ে!
দেখে সিক্ত হলাম আবেগের সমস্ত চেতনায়।
শীতের ঘনকুয়াশায় বস্রহীনের বরফগলা শরীরের মতো
অচেতন হয়ে গেলো দেহমন।


ঠিক তখনই কে যেন আচমকা ডেকে উঠলো!
খুন! খুন! খুন হয়েছে!
পাড়ার সেই সত্যবাদী সাহসী যুবকটি খুন হয়েছে!
বিষাদের মত ধ্বনি দু'টি পৌঁছে গেলো মস্তিষ্কে।
ঘুম ভাঙল আমার!
ফিরে এলাম অন্ধকারের রাজ্য হতে পাথরের রাজ্যে।
যেখান থেকে বিদায় নিয়ে রোজ স্বপ্নরা ফিরে যায় আপন নীড়ে।
যেখানে সূর্যের আলোক রশ্মিকে নিমজ্জিত করে-
পাপিষ্ঠ মানুষের তৈরি করা অন্ধকার।
যেখানে কাকের মাংস কাকে না খেলেও মানুষের মাংস মানুষে খায়।
যেখানে পুঁজিবাদের একনায়কতন্ত্র ভেঙে দিতে চাইলে-
উঠে যায় উদবাস্তু মানুষের ঠাঁই গোঁজার অধিকার।
যেখানে বাতাসের গন্ধে ভেসে বেড়ায়-
মেহনতি মানুষের বেঁচে থাকার হাহাকার।
নদীর স্রোত বয়ে বেড়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু সংবাদের আর্তনাদ।
যেখানে অনাহারীর হাতে থালা দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তির পেশা চালায় একদল লোক।
যেখানে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মুজরিমের মুক্তিপণে-
অটল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছু বেশরম মানুষ।
যেখানে রক্তের টানে রক্ত কথা বলেনা,
ভালোবাসাকে চিনতে ভুল করে প্রেমিক!


কবিতাগ্রন্থঃ প্রিয় স্বাধীনতা
▪️প্রকাশকালঃ ০৭।০৯।২০১৫ইং