সোনার হরিণ খাঁটি সোনায় হাজার ক্যারেট ভরা
বনের মৃগের মতোই তারে যায় না যে আজ ধরা।
বিদ্যা-শিক্ষা শেষ করে সেই হরিণ ধরার পালা
ধরার আগেই দক্ষতা চাই কিংবা ঘুষের থালা।
কিসের পূজায় আসবে কাছে রপ্ত হয় নি আগে?
সনদ আছ? থাকলে থাকুক! মামা-চাচাই লাগে।
মামা-চাচার কথাই শুনে সোনার হরিণ বেশি
দাওনা যতোই দূর্বাঘাস আর স্বর্ণলতা দেশি।
গহীন বনের সোনার হরিণ ধরা বড়ই দায়
শুনেছি ভাই একা গেলেই সিংহ বাঘে খায়।


তাইতো আমি তাকে ধরার দীক্ষা নিলাম কতো
বিশটি বছর শিক্ষা নিলাম কলাকৌশল যতো।
গিয়েই দেখি একটি কৌশল শিখায়নি তো স্যার!
বাঘটা আছে খুব কাছে আজ হরিণের খাঁচার।
কেমন করে আমি যে আজ হরিণ শিকার করি?
বাঘটা যদি খায় আমারে প্রাণটা যাবে মরি!
আজকে না হয় শিকার ছেড়ে গেলাম ফিরে বাড়ি
হরিণ শিকার করার সাথে যায় কি দেয়া আড়ি?
বাবা মা ও ভাইবোন আমার বসে আছেন ঘরে
দেখবে হরিণ সাধ বহুদিন শিকার করলে পরে।


বারে বারে ফিরবো কতো এমনি করে বাড়ি
বাড়ছে আমার দুঃখ-জ্বালা সুখটা গেছে ছাড়ি।
কি করি হায়! কোথা যে পাই! একটা সোনার হরিণ
হরিণ পেলেই মিটতো ব্যথা শোধ হতো সব ঋণ।
উপায় কিছু না পেয়ে তাই ঘুষের থালা ভরে
রুগ্ন একটি সোনার হরিণ নিলাম শেষে ধরে!
কি আনন্দ! কি আনন্দ! সোনার হরিণ পেলাম
কেউ বলে ভাই কেমন আছেন? কেউ বলে ভাই সেলাম!
সাহেব-সাহেব ভাবেই আমার কাটছিলো সেইদিন
দেখছি আমি চাষীর মতোই বাড়ছে আমার ঋণ।


কথা ছিলো সোনার হরিণ দেবে খাঁটি সোনা
আজ সে শুধু ছাই-মাটি দেয় করে রোনাধোনা।
বাবা মায়ের প্রশ্ন শুধুই- কী করলি রে বাপ হায়!
তিরিশ বছর পরেও কেন আমরা নিরুপায়?
ঘুরলি কেন মিছে রে তুই সোনার হরিণ পিছে?
পড়ালেখা শিক্ষা-দীক্ষা ছিলো কি তোর মিছে?
একটু কাজে লেগেই যেতি ছোট্ট বেলা হতে
তবে কি আর নামতে হতো ভিক্ষা নিতে পথে?
সোনার হরিণ লাগবে বলে করলাম একি ভুল
তিরিশ বছর কেড়ে নিলো ভুলের সেই মাশুল।


ধিক্ তোদের এই নিয়ম নীতি, বছর ফেরত চাই
সোনার হরিণ এই দেশেতে কোথাও যে আজ নাই ||


কবিতাগ্রন্থঃ প্রিয় স্বাধীনতা