আমি বহুবার বেশ্যা পাড়ায় গিয়েছি
রণজিৎ মাইতি
---------------------

আমি বহুবার বেশ্যা পাড়ায় গিয়েছি,
বরং বলা ভালো,--
যেতে না চাইলেও জীবন আমাকে টেনে নিয়ে গেছে।
কথাটা শুনে হয়তো এই লম্পটিকে আপনারা তাড়া করবেন,
নাগালে পেলে চেপে ধরবেন টুঁটি,
কিন্তু বিশ্বাস করুন
জীবন আমাকে টেনে নিয়ে গেছে।

যেবার প্রথম বেশ্যা পাড়ায় যাই
জানাই ছিলো না ওটা বারবনিতার আখড়া,
গিয়েছিলাম জমির মিউটেশন করাতে
বি. এল. আর. অফিসে।
অফিসার তার লম্বা হাত এগিয়ে বললো,--'হয়ে যাবে,খসান কড়কড়ে পাঁচ হাজার।
কেনো মিছে ছোটাছুটি করবেন!
বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন হোল্ডিং নম্বর।'
গোবেচারা আমি স্পষ্ট দেখলাম,--
পতিতাপল্লীর ঘুর্ণাবর্তে তলিয়ে যাচ্ছে একটি ছাপোষা অনুজীব

দ্বিতীয়বার পড়েছিলাম যে বেশ্যার খপ্পরে--
তিনি একজন স্বনামধন্য ডাক্তার;
শরীর থাকলে কার না অসুখ বিসুখ হয়
আর অসুখ করলে ডাক্তারের কাছে যেতেই হয়।
প্রথিতযশা ডাক্তার প্রথম দর্শনেই ভেবে নিয়েছিলেন--
আমি তার বাঁধা বাবু!
হাজারো পরীক্ষা নিরীক্ষা করালেন,তারপর--
হাতে ধরিয়ে দিলেন ওষুধের লম্বা চিরকূট।
কিন্তু দিনশেষে আমার দুর্বল শরীর আরও কাহিল হয়ে গেলো,  
হৃদয়ের জ্বর উঠলো মাথায়,
পকেটের স্বাস্থ্যও হয়ে পড়লো সঙ্গিন।
এই কথা শুনে একই রোগে ভোগা আমার প্রিয় এক বন্ধু বলেছিলো-
আরে ভাই,সেবার নামে ডাক্তাররাও আজকাল বেছে নিয়েছে দেহপসারিনীর পথ!

বাড়ির প্ল্যান করাতে গিয়েও হাড়ে হাড়ে বুঝেছি বেশ্যার খপ্পরে কি সাংঘাতিক!
মিউনিসিপ্যালিটির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক আমাকে বারবার ঝুলাচ্ছেন,
মশাই আজ নয়,কাল আসুন।
এইভাবে কাল কাল করতে করতে হয়ে যাচ্ছে মহাকাল।
মানুষ তো আর গাছতলায় থাকতে পারে না,
সুতরাং খসাতে হলো গাঁটের কড়ি।
ঠিক যেনো খেয়া পারানি,
বিপদে পড়েছো পারানি দাও,ঠিক উদ্ধার করে দেবো।

এইসব দেখি আর ভাবি,--
আদিম যুগে ফিরে গেলেই বুঝি কি ভালোই না হতো।
সভ্যতার বিষবাষ্পে আমাদের সবকিছু কি চমৎকার তামাদি হয়ে গেলো!
এই যে এতোগুলো শিক্ষিত ছেলে মেয়ে চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব
নিশ্চিত,এরাও কোনো না কোনো রূপোপজীবীর খপ্পরে পড়ে আজ সর্বস্বান্ত।
হতে পারে তিনি কোনো আমলা পদবীধারী,চতুর মন্ত্রী কিংবা ধূর্ত মন্ত্রীদের সুচতুর মাথা!