বেগুনগাছ ও জল(05-12-2020)
রণজিৎ মাইতি
-------------
উঠোনে বেগুন গাছটি যতোদিন ফলন দিতো ঝুড়িঝুড়ি,
গাছটির গোড়ায় রোজ দুবেলা নিয়ম করে ঢালতাম বালতি বালতি জল।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই যুবতী সবুজ ছনছনে গাছটির দিকেই চলে যেতো চোখ জোড়া;
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতাম পাতার ফাঁকে কোথায় ঝুলছে কতোগুলো টাটকা বেগুন।
পোকার আক্রমণ হলে তুরন্ত স্প্রে করতাম কীটনাশক,
এবং পাতা একটু হলদে হলেই সঙ্গে সঙ্গে দিতাম সুষম খাওয়ার;
ঠিক যেভাবে পরিষেবা পান বাড়ির সবচেয়ে  উপার্জনশীল সভ্যটি।

আসলে মানুষ কিনা!যেখানে মধু সেখানেই মানুষ নামক যদু-মধু-শ্যাম;
যেখানে সেটুকুরও ছিটেফোঁটা নামগন্ধ নেই,গাছটি বটবৃক্ষ হলেও উপড়ে ছুঁড়ে ফেলি ডাস্টবিনে;
হয়তো এভাবেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বৃদ্ধাশ্রম নামক আধুনিক ডাস্টবিনটি!


যেমন এখন গল্পের যদু নামক মানুষটি বুড়িয়ে যাওয়া বেগুন গাছটির দিকে একবার ফিরেও তাকায়না;
দেয়না জল সার কীটনাশক
বরং আগাছা ভেবে উপড়ে ফেলার ফন্দি আঁটে!


সত্যিই সভ্য মানুষের ফন্দির অভাব হয়না;
দেখেছি যতোদিন জোয়াল টানতো বাড়ির জোয়ান বলদটি
ততোদিন গৃহকর্তা নিজের হাতেই দিতো পেট ভরে জাবনা
এক সময় ঠিক যেভাবে আমি দিতাম জল সার,যত্নআত্তি করতাম আমার যুবতী বেগুন গাছটিকে

সেই হাতও একদিন বেজায় কৃপণ হয়ে গেলো
এখন বৃদ্ধ গরুটির মুখে এক আঁটি শুকনো বিচালি দিতেও বুক শুকিয়ে যায়
বরং যেদিন থেকে বলদটির বুড়ো হাড় জোয়াল টানায় অক্ষম হলো
সেদিনই ডেকে আনলো যবন ইসমাইল মিঞাকে
কসাইয়ের কারবারি,এই গঞ্জে সবাই যাকে  একডাকে চেনে


কি আশ্চর্য না,তবুও নাকি মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে যারা বুড়ো শিবের মাথায় এক ঘড়া জলও ঢালেনা !