দরজা 2 (সহজ সরল কথার আড়ালে কবিতার দর্শন কবিতাটির চালিকাশক্তি)
কবি-সৈকত পাল(নীরব দুপুর)
আলোচক--রণজিৎ মাইতি
---------------------
কিছু কিছু কবিতা আপাত সহজ সরল।মনে হতে পারে এটা আবার কিরকম কবিতা।কিন্তু মনোযোগী পাঠক যখন সহজ সরল কথার আড়ালে সঠিক রস বা বার্তাটি বুঝতে পারেন তখন আপ্লুত না হয়ে থাকতে পারেন না।কবি সৈকত পালের (নীরব দুপুর) "দরজা 2" কবিতাটি তেমনই একটি কবিতা।


বিদগ্ধ কবি তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে চেনালেন জীবনের একটি নতুন দরজা।প্রতীকী সেই দরজারও দুটি পাল্লা।যে পাল্লা দুটিকে আমরা জানি অধরাধর নামে ।যে পাল্লা দুটির কথা ভাবলে ফিরে যেতে হয় স্কুল জীবনে।শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে শিশুদের হট্টগোল শুনলেই কড়া ভাষায় ধমক দিয়ে বলতেন"সাট দ্যা মাউথ"।সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতো আমাদের মাউথ অরগান।স্কুলের পরিবেশে একমাত্র কথকঠাকুর হলেন শিক্ষক,শিশুরা শ্রোতা মাত্র।একমাত্র তাদের কথা বলার অধিকার শিশু মনে উথ্বিত প্রশ্নের সমাধান নিরসনে।


কিন্তু সংসার জীবনে মানুষকে কথা বলতেই হয়,কখনো কাজের প্রয়োজনে,কখনো নিছক ভাববিনিময়ে।কিন্তু কবি বললেন,সেখানেও রাশ থাকা উচিত নিজের হাতে।কুলুপ আঁটানো উচিত ঠোঁট নামক দরজার পাল্লায়।


"কখন খোলা রাখতে হয়
কখন বন্ধ রাখতে হয়"


তা জানতে হয়


স্বাভাবিক ভাবেই মানব মনে প্রশ্ন আসে কেন সেই পাল্লা খোলা ও বন্ধ রাখা উচিত?


পরের লাইনে এসে কবি নিজেই দিলেন পাঠকের মনে উথ্বিত সেই প্রশ্নের জবাব।


"না জানলে


ঘর ভাঙার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে।"


যেমন কোনো কোনো ছাত্র ক্লাসে বেশি কথা বলে ক্লাস ভণ্ডুল করে দেয়,এবং শিক্ষক মহাশয় মৃদু তিরস্কারের সুরে বলেন, "ইউ আর সো সো টকেটিভ"।তেমনি সংসার জীবনে বেশি কথায় অনেক সময় সংসার ভেঙে যায়।কারণ বেশি কথা যারা বলেন তারা ভুলভাল ও মিথ্যা কথা বেশি বেশি বলেন।ফলস্বরূপ সংসারও হয়ে যেতে পারে খানখান।


এই প্রসংঙ্গে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত 'তাসের ঘর' গল্পটির কথা মনে পড়ে গেলো।যেখানে বেশি কথা বলতে গিয়ে ভুলভাল কথার কারণে নায়িকা শৈলর সুখের সংসার ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছিলো।যদিও পরবর্তিতে তা আবারও জোড়া লেগে যায়।কিন্ত সবসময় যে ভাঙা সংসার জোড়া লাগবে এমন কোনো কথা নেই।


তাই কবিও তার "দরজা 2" নামক কাব্য কণিকার মধ্য দিয়ে তাঁর পাঠককূলের কাছে একটি বার্তা দিতে চাইলেন।কি সেই অত্যাবশ্যকীয় বার্তা? কবি নির্দিধায় বললেন,গৃহশান্তি বজায় রাখতে মিতবাক হও।প্রয়োজনে কথা বলো,অপ্রয়োজনে হও বাকসংযমী।এই বার্তাই কবিতাটিকে উতরে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট।


চমৎকার কবিতা।সহজ সরল বিস্তার হলেও কবিতার দর্শন কবিতাটিকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।এজন্যে কবিকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।


পরিশেষে বলি,ঠোঁট দুটিকে দরজার পাল্লার সঙ্গে প্রতীকী সাদৃশ টেনে কবি নিঁখুত উত্তোরণ ঘটিয়েছেন কবিতার কাব্যিকতায়।সেদিক থেকে নামকরণের সঙ্গে সঙ্গে কবিতাটিও সফল।


কবির কলম এভাবেই এগিয়ে চলুক।অনেক অভিনন্দন রইলো প্রিয় কবির কলমে।