সংবাদ কলকাতা(04-12-21)
রণজিৎ মাইতি
--------------------
শুনেছি আমার প্রপিতামহের বাবা-মা থাকতেন গাছতলায়;
রোদে পুড়ে,জলে ভিজে,শীতে ঠকঠক কাঁপলেও মদনদেবের আশীর্বাদে দিব্যি গাছতলাতেই বিয়োতেন দুষ্টু মিষ্টি এক একটি নাড়ুগোপাল।


প্রপিতামহ ছিলেন যেমন গরম কাহিল,তেমনি ভীষণ শীতকাতুরে;
তাঁর ছাগলস্বভাব মন আকাশে ঘন মেঘ দেখলেই ভ্যা ভ্যা করতো,
তাই খুঁজতেন মাথা গোঁজার মতো নিশ্চিত একচিলতে ঠাঁই।
বালবাচ্চা ও পরিবারের মুখে দু-মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার পর
অনেক চেষ্টা চরিত্র করে শেষ জীবনে সেই গাছতলাতেই বানিয়ে ছিলেন দরমার শান্তিকুঞ্জ।


আমার পিতামহ ছিলেন যেমন শৌখিন তেমনই রুচিশীল;
তাঁর বাবার নির্মিত শান্তিকুঞ্জ তাঁর কাছে অশান্তির কারণ!
হয়তো রোদ-জল থেকে মাথা বাঁচে;
কিন্তু মনেরও তো চাই উপযুক্ত খোরাক।
যার দেওয়াল ভরে থাকবে আলপনায়,আলাপে-প্রলাপে থাকবে প্রাইভেসি।
তাই প্রপিতামহের দলমার শান্তিকুঞ্জের হলো চিরতরে নির্বাসন।
সেই স্থানে নির্মাণ করলেন মাটির    সারেগামা,
যার চাল জুড়ে হোগলা বিচালি।
আহা কি সুখ,কি শান্তি!
যেমন গরমে ঠান্ডা,তেমনি শীতে গরম।
শুনেছি কাজ শেষে ঘেমে নেয়ে বাড়ি ফিরলে তাঁর তপ্তকাঞ্চন রূপবতী স্ত্রী (অর্থাৎ আমার শ্রদ্ধেয় পিতামহী)হাসিমুখে কর্তার মুখের সামনে ধরতেন মাটির গ্লাসে মাটির ঘড়ার ঠাণ্ডা জল
মাটি মাটি গন্ধে ঠাকুরদাও হতেন  শরীর-মনে শীতল।


কিন্তু সুখকামী ও সৃষ্টিশীল মানুষ বেশি দিন সুখী থাকতে পারেন না;
মাটির মোহে আচ্ছন্ন হলেও তাঁর অসুখী মন জীবনের শেষ দিন পর্যন্তই ছিলো অসুখী!
হতে চেয়েছিলেন আধুনিক ময়দানব।


জন্মসূত্রে আমার বাবাও পূর্বসূরীর সেই অসুখ ধারণ করেছিলেন হৃদয়ে;
কিন্তু আজীবন হাজার চেষ্টা করেও মুক্তি পাননি সেই অসুখ থেকে।
মাথায় বৃহৎ সংসারের বোঝা ও পাহাড়প্রমাণ বুকচাপা অসুখ নিয়েই মাথা রাখেন মাটির মায়ামন্দিরে।


আমিও এড়াতে পারিনি আমার জন্মনক্ষত্র;
ভূতপূর্ব হলেও প্রপিতামহ,পিতামহ ও পিতৃদেবের অসুখীভূত চেপে বসেছে ঘাড়ে;
ক্রমে ক্রমে তা হৃদয় ছাড়িয়ে উঠে এসেছে মননে।
অনেক ঘাম নুনের বিনিময়ে নির্মাণ করি বাতানুকূল দালান।
আরামে আরামে ভরে ওঠে আমার বহু সাধের আরামকুঞ্জ।


হাঁ,এভাবেই তিল তিল করে গড়ে উঠেছে আজকের কলকাতা।
যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আমারই প্রপিতামহ,যাঁকে পৃথিবী চেনে জব চার্নক নামে।।