সোনার ডিম ও হ্যাচারি
রণজিৎ মাইতি
---------------------
সবাই চাইছেন তাদের অতিআদরের পোষা হাঁসটি সোনার ডিম পাড়ুক;
শুধু চাওয়া নয়,আন্তরিক ভাবেই চাইছেন!
কেননা হাঁসেদের পুর্বপুরুষ,পূর্বপুরুষদের পূর্বপুরুষেরাও
কেউ কখনও পাড়েনি সোনার ডিম।
তাই শাবক অবস্থা,অর্থাৎ যখন একটিও পালক গজায়নি তখন থেকেই কড়া নজর দেওয়া হলো সুসম খাদ্যে,
বিদ্যার জন্যে পাঠানো হলো মাতৃভাষা নয় বরং নামজাদা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে।

দিন কয়েকের মধ্যেই হাঁসটি ঠিক হাঁস নয়,হাঁসফাঁস করতে করতে মরাল হয়ে উঠলো,
ঠিক যেমন ম্যাজিশিয়ান পিসি সরকারের ইন্দ্রজালে দশ টাকার ছোট্ট রুমাল হয়ে ওঠে কবুতর।
শিক্ষার গুণে কৈশোর উত্তীর্ণ হাঁসটি প্যাঁক প্যাঁক নয়
বরং সাহেব সুবোদের মতো ট্যাক্ ট্যাক্ ইংলিশ বলে,
মা কে বলে মাম্মি,
বাপকে ড্যাড,
এর বাইরে জগতের সব পিতৃ-মাতৃ স্থানীয়া হলো আঙ্কেল-আন্টি।
এসব শুনে বাবা-মা এর সোনা মুখ খুশিতে সকালের সূর্যের মতো ঝলমল করে,
গর্বে বুকও ফুলে পাঁচ হাত হয়,
কিন্তু হ্যাচারিতে ডিম সংগ্রহ করতে গিয়ে মা-বাবা হন চরম হতাশ,
সুতরাং হন্তদন্ত হয়ে ছোটেন যোগ্য প্রশিক্ষকের কাছে।

এখন পৃথিবীর কোণায় কোণায় পোল্ট্রি প্রশিক্ষক!
তাদের কথা মাত্রে বেদবাক্য,তারা এক একজন বেদব্যাস।
তাঁরা বলেন শুধু ভালো-মন্দ খাওয়া ও ভালো ভালো স্কুলে পড়ালেখায় কিস্যু হবে না;
পাড়ি দিতে হবে সাত সমুদ্দুর,তেরো নদী।
খেতে হবে সোনার চামচেতে এবং ঘুমাতে হবে সোনার পালঙ্কে,
তবেই না মিলবে জীবনের সঠিক অঙ্ক।

যে মরাল একসময় সাঁতার কাটতো পুকুরে,
উড়ে যেতো এক নদী থেকে আর এক নদীতে,
স্থুলতার কারণে সে এখন উড়তে পারে না!
তাই গুরুবাক্য পালনে যান্ত্রিক-পাখির সাহায্যে উড়ে চলে যায় উন্নত হ্যাচারিতে।

হাঁসটি এখন রোজ সোনার ডিম পাড়ে।
সেসব ডিম নিয়ম করে পার্সেলে পাঠিয়েও দেয় হাঁস-মা ও হাঁস-বাবার জন্যে,
কিন্তু হাঁস মা-বাবার পূর্বের সেই হাসি মুখ আর নেই,
যান্ত্রিকতার চাপে হাঁসটিও যন্ত্র হয়ে গেছে!