আমাদের পাঁচিল দেওয়া কোঠাবাড়ি ।
চারদিকে ঘন সবুজ গাছ-গাছালি, পুব দিকে একটা জামীর গাছ ;
সন্ধে হলেই হাওয়ায় মন-কেমন-করা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ...
তার পাশেই একটা লম্বা বুড়ো তাল,
গোড়ায় ঝোপ-ঝাড়, ফণীমনসা আর উইয়ের ঢিবি ;


এক অভিজাত চন্দ্রচূড়ের সংসার ।


ছোটবেলায়, ‘এটা খাব না, ওটা খাব না’,  বায়না ছিল খুব ।  
আমাকে খাওয়ানো ছিল বেশ ঝঞ্ঝাটের ব্যাপার ;
মাণ্টিমাসির ওপরে আমাকে খাওয়ানোর ভার ছিল ।
কোলে তুলে ঘুরে ঘুরে সে কত খাওয়ানোর চেষ্টা ;
না পারলে তালগাছটা দেখিয়ে বলত, “ খেয়ে নাও, সোনা,
না খেলে, ঐ তালগাছে যে একানড়ে থাকে, সে এখনই নেমে আসবে ।“
                              ভয় পেয়েও ভবী ভুলত কী ?


আমি না খেলে মান্টি মাসির বকুনি খাওয়া ছিল বাঁধা ।
আমাকে বুকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরত মাসি ;
                       দু’টি চোখ ধারাশ্রাবণের মিনতিকদম্বমুকুল ।


সে  এক শারদ পূর্ণিমা সন্ধ্যা... চারদিকে ফিঙফোটা জ্যোৎস্না ;
মাণ্টিমাসি একা সেই বুড়ো তালের নীচে উইয়ের ঢিবিতে
                                    রানির মতো নাকি বসেছিল ...
রাত বাড়ছে...
মাণ্টিমাসির দেখা নেই ;
খুঁজতে খুঁজতে যখন মাসিকে পাওয়া গেল
      তখন ঘাড় হেলে পড়েছে, মূখে গ্যাঁজলা...
                 রাত শেষ হওয়ার আগেই চলে গেল মাণ্টিমাসি ......


আমরা তো তখন ছোট ;
       সকালে আমাদের বলা হল মাসি নাকি শ্বশুর-বাড়ি গেছে ;


বড়ো হয়ে জেনেছি যা জানার ।
মাসিকে মেসো ত্যাগ করেছিল আগেই,  
তবু কী করে যেন তার কোলের দখল নিতে আসতে চেয়েছিল
                             আমারই এক প্রতিদ্বন্দ্বী !


এখন আমি হাসি হাসি মুখে অপমান, সুখ-দুঃখ, আনন্দ,
            লাঞ্ছনা, উপেক্ষা, ব্যঙ্গ, গলাধাক্কা সব খেয়ে নিই...


সে ওই একানড়ের ভয়ে নয়
                               মাণ্টিমাসির জন্য......