পরিচয় এবে মোর নহে জানাবার
নিষাদ-নন্দন বটে, মহাকাব্যে আর
এর বেশি স্থান মোর অতি সঙ্কুলান।
শিক্ষন পুরিতে দেবগৃহ হতে ম্লান
নত শিরে ফিরেছিনু, দীর্ঘকাল হলো ,
জীবিকা সন্ধান এই জীবনে আইলো
শিক্ষনে শমন রূপে। গুরুদেব মোর
বিঁধিল নম্র হৃদি হীন কৌতুকে ঘোর।
যাতনা সঙ্গী করি বসন্ত গেল কত!
মস্তক ভরায়ে তবু আশির্বাদে তাঁর
দিবারাত্রি সাথী থাকে ধনুক আমার।
মুরতি ধ্যানেতে আমি হইনু সফল
আশির্বাদে আজ।


                  কী বা হেন মায়াজাল
নিরখিনু আমি? চঞ্চল কুক্কর হোথা
মুকসম স্তব্ধ রহে নাহিকো বারতা!
ধ্যানস্থ নিবিষ্ট নর ব্যাস্ত শিক্ষাতরে
মুরতি সম্মুখে! কী বা পরিচয় ধরে
নর-সুন্দর, জিজ্ঞাসিতে হবে- কেই বা
গুরুদেব তার।


                     "কত ভাবমগ্ন রবা
হে সুন্দর, শুনো বাক্য মোর, জানিবারে
উৎসুক হৃদয় আমার, কে বা ধরে
তোমা হেন শিষ্যটির গুরু পরিচয়?
শরবিদ্ধ মুক অয়ি সারমেয় রয়
শিক্ষা সফলতা ক্ষেত্রে উজ্জল প্রতীক।"


"আর্য্যে  লহ প্রণাম। স্বপ্ন জানায় ঠিক
তব পরিচয়।সন্দর্শনে মনে হয়
দেব দ্রোনাচার্য্য হবে আর্য্য পরিচয়।
ভ্রম না হইবে কভু দেবেরে স্মরিতে,
নমি প্রভুপাদ পুরি শিক্ষন আমাতে। "


বিস্ময়ের ঘোর মোর বাড়িল দ্বিগুণ
ভ্রম নাহি দর্শনে, নির্ভুল সদগুণ!


"বটে, তুমি সেই একলব্য ব্যাধ। যারে
একদা করেছি বিদ্ধ রঙ্গরস ভরে
সেই তুমি? সত্য, ভরিলো বক্ষ আমার।
শিষ্য কত পরে আছে দেখি চারিধার
যায় নাই কেহ তবু তোমার অগ্রেতে।
ধন্য তুমি। শুধু মাত্র আপন চেষ্টাতে
হয়েছো সফল "


       .         কিন্তু হায়, চিত্তে মোর
কলুষতা আসে কেন? কু-মন্ত্রের ঘোর
কেন করে বিদ্ধ মোরে? পাণ্ডু গুরুদেবে
অর্জুন সম্মুখে শেষে কি উত্তর দিবে?
শেষে কি আমার যত মিথ্যা অহঙ্কার
ক্ষণিকের নম্রতায় হবে চুরমার!
চিন্তা নহে আর।
                        
                "একলব্য মোর, শুনো
লভিয়াছ জয় তাহে সন্দ নাই কোন,
তবুও ধরেছ তব করপুটে যাঁর,
যাদুমন্ত্রবলে প্রাপ্ত শিক্ষন তোমার-
দক্ষিণা কি দিয়েছো তাঁরে? পূর্ণতা পাবে
জেনো শিক্ষন তোমার গুরুদেব যবে
লবে দক্ষিণা তাঁহার। "


                     "দর্শনের ভাগ্য
ভরা এই শুভক্ষণে দিব তব ভোগ্য
দক্ষিণা, আদেশ মিনতি করি হে দেব
তব সন্নিকটে।"


                  "আশা করি তাই পাব
চাহিব যা আমি। "


                 " মিথ্যা কভু নাহি বলি
বাঞ্ছা যাহা হবে প্রভু দিব তা সকলি। "


"দাও তবে বৃদ্ধাঙ্গুলি দক্ষিণ হস্তের। "


"দান করি শিক্ষা তব গুরুদেব ফের
সেই শিক্ষা হরিবারে চাও! কেন তবে
নিষাদে করেছো দয়া, যদি কেড়ে লবে? "


"প্রশ্ন-প্রশ্ন থাক। আশা করি পূর্ণ করে
দক্ষিণা, ঋণমুক্ত করিবে আপনারে। "


"জাতে নীচ বটে তবু নহি মিথ্যাভাষী।
দেব! নয়ানে তোমার-হেরি অশ্রুরাশি
স্মরায় আমারে কোনো জালবদ্ধ তুমি,
করিব না দোষী কারে। ইতিহাস ধরে
বহু রুদ্ধ ক্ষুব্ধ ক্রোধ স্বীয় বক্ষপরে।
কামনা আমার শুধু তব আশির্বাদে -
মহাকাব্যে দিও স্থান বঞ্চিত নিষাদে। "