দূরে বসে ভাবছি আমি কোথায় আমার গাঁ।
চোখ বুজিলে সামনে আসে অনেক স্মৃতি হাঁ।।
এপাশ ওপাশ করেই দেখি দুই নয়নে জল।
হাত পা দুটি চলে না আর ফুরিয়ে গেছে বল।।


ছায়ায় ঘেরা আম বাগানে যেথায় আমার গাঁ।
সাঁঝ সকালে ডাকতো সেথা নানান পাখীর ছা।।
রোজ সকালে ঝাঁপি মাথায় চলতো চাষির দল।
কাঁচা রোদে চিকিমিকি করতো শিশির জল।।


আসতো বৈশাখ গরম হাওয়া কালবৈশাখীর ঝড়।
কাঁপতো হৃদয় দুরু দুরু উড়ত চালের খড়।।
ঘন মেঘে কালীর ঘাটা বিজলী চমক দূর।
মেঘের ডাকে জমীন কাঁপে কান্না কাটির সুর।।


কৃষক কুলে মহা সাড়া ধান কাউনের চাষ।
একের আগে অন্য চলে ফুরিয়ে যাবে মাস।।
বাড়ী বাড়ী কাজের পালা গৃহ বধূর হাত।
সময় কাটে হয় না খবর ঘনিয়ে আসে রাত।।


টাপুর টুপুর বর্ষা নামে রিম ঝিমা ঝিম ঢল।
খালে বিলে উপছে চলে বহুত দূরে জল।।
বিলের মাঝে নানান ফুল ও নানান পাখীর দল।
বাড়ায় শোভা কলোতানী অরুপ ধরার তল।।


এমন দিনে ঘরের বাহির, ঘরের কোণে ঠায়।
গল্প গানে গেছে সময় বলার কিছুই নাই।।
বাতায়নে দেখছি বসে দূরে বিলের জল।
দিক বিদিকে ছুটেই চলে, চলে ছলাৎ ছল।।


সকাল বেলায় শিশির কণা মুক্তা মণির রুপ।
হারিয়া যাবে ক্ষণিক পরে দাড়িয়া তবে চুপ।।
খণ্ড মেঘের অল্প ঝরা হাওয়ায় উড়ে দুর।
রোদ্রু ছায়ার অরুপ খেলা লোকে সুরাসুর।।


চাঁদনী রাতে চাঁদের আলো পানির উপর ঢেউ।
রুপে গুনে অলংকারে সাজিয়ে গেছে কেউ।।
দুরের আকাশ তারার দেশে মোমের বাতির ছায়।
জ্বলে নিভে মিটমিটিয়ে বিরতি আর নাই।।


নাবান্নেরি খুশীর হাওয়া সব কৃষকের ঘর।
সবাই মিলে চলে হেথায় নাই বা কেহই পর।।
জারী শারী গানের পালা চলে সারা রাত।
খুশী ভরা গ্রাম খানিতে আনন্দের প্রভাত।।


হেমন্ত-রি হিমেল হাওয়া শীতের কথা নিয়ে।
দক্ষিণ পাণে চলতো ধীরে গায়ের ওপথ দিয়ে।।
ছেলে বুড়ার কাঁপ কাপানি, পিঠার আয়োজন।
ইস্টি কুটুম দাওয়াত সেথাই খুশি ভরা মন।।


গাছের ডালে নাই সে পাতা ফুলের আয়োজন।
মধুর লোভী ফুলের মাছি উড়ে সারা বন।।
খালে বিলে ফুরায় পানি মাছের দিবস শেষ।
পুটীর ভাজি ডাউল ভাতে খাইতে আহা বেশ।।


ফুলে ফুলে যেতো ভরে বসন্ত-রি বন।
জান্নাতেরি টুকরা তাহা বলতো আমার মন।।
খোদার কাছে দু’হাত তুলি, খোদা দয়াময়।
গাঁওখানি মোর শত জনম এমনি যেন রয়।।