(১)
চাষীর ছেলে মানিক মীয়া লম্বা মাথার চুল।
চোখ দুটি তার ভ্রমর কালো মুখটি চাঁদের ফুল।।
গানের সুরে বলে কথা চলায় যেন ঢেউ।
ফিনফিনিয়ে হাওয়ায় চলে সংগে যাবে কেউ!!
সাত সকালে গরুর পাল আর হাতে বাঁশের বাঁশী।
গামছা বাধে দুখান রুটি সুখ যে কত রাশি।।
বাজায় বাঁশী মধুর সুরে কোকিল আওয়াজ তারি।
ছালাম জানায় মাঠের ফসল ধান কাউনের সারি।।


শাউন মাসের বর্ষা জলে রাস্তা ঘাটে ভারা।
কেমনে যাবে মাঠের পাণে রাস্তা আজি হারা।।
মোড়ল বাড়ীর পথ ধরে তাই মানিক মিয়া চলে।
বুক যে কাঁপে দুরু দুরু লোক না কিছু বলে।।
ভালই ভাল চলে মানিক কেউ করে না মানা।
একলা মনে গুন গুনিয়ে গায় সে কত গানা।।


পর বিহানে মনের সুখে দিল বাঁশীর টান।
আনচানিয়ে উঠলো ওধার মোড়ল জাদীর প্রাণ।।
রুপে গুনে জ্বলে মোতি নীলি নীলি আঁখি।
বন্ধ খাঁচায় শিকল বাঁধা সোনার বরণ পাখী।।
কথা যেন কথা তো নয় দোয়েল পাখীর সুর।
চলায় তারি ছন্দ যেমন রুম ঝুমে নূপুর।।
মায়ে ডাকে সোহাগ ভরে আমার সোনামণি।
তিন ভূবণে সকল পাওয়া আমার সোনার খনী।।


ছাদে গিয়ে দেখে মণি চলে রাখাল ছেলে।
হায়রে নিঠুর মারল ছুরি এই না বীহান বেলে।।
কি যে করি কি যে বলি  মনে কথা রাশি।
সাত সকালে মন চুরালো ঐ রাখালের বাঁশী।।
আস্তে পায়ে আসে ঘরে তীর বিধা এক পাখী।
মনটা গেছে বাঁশীর সনে দেহটা এই বাঁকি।।
ছটফটায় মন ঘরের মাঝে সন্ধা কখন হয়।
ফিরবে ঘরে রাখাল রাজা মন করিছে জয়।।
দুপুর গেল সন্ধ্যা হল বসলো মণি ছাদে।
পথের পানে চাইয়া শুধু নয়ন দটি কাঁদে।।
হঠাৎ কানে মধুর আওয়াজ দুরে বাজে বাঁশী।
হাওয়ার সনে বন্ধু করে আসছে তাহা-ই ভাসি।।
নিকট থেকে নিকটতম চলে রাখাল রাজা।
মন হরিল বাঁশীর সুরে দিলে একি সাজা।।
বলি বলি হয় না বলা হায় রে ভালবাসা।
বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না হায়রে নারীর দশা।।


গুন গুনিয়ে চলে মানিক সুখ যে কত মনে।
মধুর লোভী ভ্রমরা যেন উড়ছে ফুলের বনে।।
হঠাৎ দেখে ছাদের উপর পূর্ণিমারি চাঁদ।
চোখ ফিরানো যায় গো তবু মন মানে না বাঁধ।।
বারে বারে দেখে মানিক পাগল করা পরী।
কিসের যাদু দুই নয়নে মনটা নিলো হরি।।
ঘরের পাণে পা চলে না কি হল আজি জানি।
মায়ার জালে আটকে নিলো ঐ কি মায়ার রাণী।।
দুইয়ে দুইয়ে চারটি নয়ন এক এক দুটি দিল।
ভালবাসায় বন্দী হল শত কালের মিল।।