গভীর রজনী, মদিনার পথে নাই মানবের সাড়া।
তন্দ্রার কোলে আশ্রিত সবে নাই কিছুতেই তাড়া।।
ঘর ঘর সব জমিছে আঁধার জ্বলে না কোনই বাতি।
চুপি চুপি চলে এক মুছাফির নাই তার কোন সাথী।।


এঘর ওঘর সবখানে দেখে করে না সে কোন ভুল।
কোথায় বা কার দুখ যাতনা দেখিবারে প্রজা কুল।।
হঠাৎ দেখে সে দুর কুটীরে ক্ষীণ জ্বলে এক দিয়া।
না জানি সেথায় কিসের বারতা চমকে উঠে যে হিয়া।।

জোর পায়ে চলে সেই মুছাফির মনে তার শত কথা।
কোন সে দুখী, ঘুম নাই চোখে, না জানি কিসের ব্যাথা।।
ঘরটির পাশে দাড়ায় পথিক উঁকি মারে জানালায়।
তিনটি শিশু ঘুমায় সেথা, কাঁদে বসি এক মায়।।


আস্তে আওয়াজ দিল সে পথিক- কেহ আছেন কি ঘরে।
কে! বলিয়ায় দাঁড়ায় জননী কাঁপে তার অন্তরে।।
দ্বার খুলিয়া দাড়ায় জননী, সুধায় সে মুছাফির।
কিসের ব্যাথা অন্তরে মাতা, নয়নে তোমারি নীর।।


তিনটি শিশু উপোষ যে আজ ঘরে নাই কোন দানা।
কাঁদে বারেবার ভাত দাও মা, শোনে না কোনই মানা।।
খালি পানি তাই করছি গরম, এমনি হবে যে ভোর।
মিছে ভরসায় শুয়ে গেছে হায় রতন মানিক মোর।।


আসছি জননী, বলেই পথিক বাহিরে রাখে সে পা।
তীর ধনুকের তীর চলে যেন বাঁধা আর মানে না।।
ক্ষণ পরে পথিক দাড়ায় দুয়ারে আটার বস্তা পীঠে।
দেখে জননীর চোখে আসে জল ব্যাথায় যে বুক ফাটে।।


পাকাও রুটি ওগো জননী, তোমার বাছারে লাগি।
ক্ষুধায় তাদের পেট পুড়ে যায়, উঠিবে এখুনি জাগি।।
কে তুমি বাবা, দীনের দয়া করিছো এমন করে।
এ জিবনে হায় সকল দোয়ায় দিলাম তোমায় ভরে।।


রাজ্যের রাজা খলিফা উমর কভু না এমন করি।
দেখে না তো সে প্রজা সাধারণ ভুক্ষায় যায় যে মরি।।
শুনিতে কথা বলে সে পথিক, সামনে তোমার ও পাপী।
জননী গো, সাজা দাও মোরে, চাহি না যে আজ মাফি।।


খলিফা উমর তুমি বাছাধন! পুড়া এ কপাল মোর।
না জানিতে হায় বলেছি কত না করেছি কত বা শোর।।
খোদার দুয়ারে করি মোনাজাত তোমার লাগি যে আজ।
চির জাগ্রত হবে তুমি বাছা মাথাতে নূরের তাজ।।