(৪)
মাঠের পানে চললো মানিক মোড়ল বাড়ীর পথে।
মনটা আরও শক্ত করে ভাবছে যাহা রাতে।।
বাজায় বাঁশী মনির নামে প্রেমিক বাহাদুর।
মোড়ল বাড়ী প্রতিধ্বনি পাগল করা সুর।।
মনি ঘরে রইতে নারে তারই নামের বাঁশী।
আসছে জানা প্রাণের রাজা পাগল চির দাসি।।
পথের ধারে দাঁড়ায় মনি ভয়ের বাঁধন হারা।
বলবে কথা মনের সকল রাতে জাগা তারা।।
অনেক কাছে রাখাল রাজা দুখের জোয়ার শেষ।
প্রেম দরিয়ায় প্রেমের তরী চলে উজান দেশ।।
চারটি নয়ন পাশা পাশি রাতের ফোটা ফুল।
সুখের জোয়ার ভরা নদী উপছে উঠে কুল।।


পিছন ফিরে দেখে মানিক আসছে মনির বাপ।
হৃদয় মাঝে চমকে উঠে ফণা তোলা সাপ।।
কোন কুলেতে জনম রে তোর কোথায় আছে ঘর।
নুন আনতে পান্তা ফুরায় রাখিস না খবর।।
কোথায় মনি শাহাজাদী কেমন রে তোর সাধ।
জমিন থেকে ধরবি এসে আসমানের ঐ চাঁদ।।
ভালোয় ভালো বলছি রে শুন আজকে দিনোমান।
গাঁয়ের মায়া ছাড়তে হবে, বাঁচবে না তো প্রাণ।।


মিনিট দুয়েক স্তব্ধ মানিক মনে মনে বলে।
সত্যি যাবে সকল ফেলে অনেক দুরে চলে।।
এই জীবণে সবই বৃথা শুধুই বালির বাঁধ।
দুখের জোয়ার ভাঙ্গে সদা মিটল না তো সাধ।।
আসবে না হায় সুখের জোয়ার সারা জনম ভরে।
এমনি করে থাকব পড়ে সেই সময়ের তরে।।
মাঠের পানে যাবে না আর যাবে নিরুদ্দেশ।
স্বপ্ন যাহা মনের মাঝে হল না তা শেষ।।
বাঁশীটারে দুঃখ ভারে গোসল চোখের জল।
ভালোবাসার দাফন হল কবর মাটির তল।।
সকল আশা সকল ভাষা কবর সারি সারি।
গুনে গুনে হবে কি শেষ নাই বা খবর তারি।।


বাড়ীর ভিতর এল মোড়ল ভয়ঙ্করী রুপ।
ইট পাথর আর বালিও ভয়ে হয়ে গেছে চুপ।।
মনির মাকে ডাকে তখন শক্ত আওয়াজ তার।
ঘরের বাহির হবে না সে বন্ধ রাখো দ্বার।।
কুলের মুখে কালির লেপন এই কি মেয়ের কাজ।
ভেঙ্গে গেছে মানের মানি অহংকারের তাজ।।
বংশ কুলে হয় নি যাহা করলো মেয়ে আজ।
হায় রে আমার কুলক্ষিনি নাই কি শরম লাজ।।


চলবে