(৫)
পূবের গাঁয়ে মনু মোড়ল, সন্ধ্যা হওয়ার পর।
যাবে সেথা ফজু মিয়া, পুত্র আছে ঘর।।
ফজু মিয়া দেখতে সুরত আই, এ, দিছে পাশ।
পড়ার ঘরে সারি সারি বই কিতাবের রাশ।।
বলে কথা ইংরেজিতে ইয়েস নো আর গুড।
ক্ষিদে পেলে মাকে বলে, গিভ মি এ সাম ফুড।।
বিয়ের কথা পকাপাকি! নয় তো আবার কি।
শক্ত জবাব কণ্ঠে তারি যেমন তোমার ঝি।।


সন্ধ্যা হলে মনুর বাড়ী লোক গমাগম হাট।
সারি সারি ধানের গোলা মাচাং ভরা পাট।।
গোয়াল ভরা গরু ছাগল পুকুর ভরা মাছ।
ঘরের পিছে সারি সারি তাল খেজুরের গাছ।।
রাতের খানার সমাপনে বাটা ভরা পান।
অনেক দিনের দেখা তাদের বইছে খুশীর বাণ।।
কথায় কথায় মোড়ল মিয়া কইল মনুর আগে।
তোমার পুলায় লইব আমি সাধ যে বড়ই জাগে।।
মনি আমার রুপে গুনে চাল চলনে ভালো।
তোমার এ ঘর কুশুম কানন জ্বালবে চাঁদের আলো।।
শুনে কথা মনু মিয়ার খুশীর জোয়ার বয়।
মোড়ল মোড়ল আপন জ্ঞাতি কথা মন্দ নয়।।


কথা সবই হইল পাকা আসছে মাসে দিন।
সারা বাড়ী রঙ্গের জোয়ার বাজলো খুশীর বীণ।।
পর বিহানে মোড়ল মিয়া আসলো ফিরে ঘর।
একে একে সবার কানে গেল সে খবর।।
সখী গণে আসলো ছুটে বসলো মণির পাশ।
মিলে গেছে হায়রে সখী চিরদিনের দাস।।
কেউ বা বলে ধন্য অলি ফোটা কনক ফুল।
সবাই মিলে হাতে তালি হেসে না পায় কুল।।
ওসব কিছু বিষের ছোঁয়া আটকে আসে শ্বাস।
রাখাল ছাড়া অন্য কোথা কেমনে হবে বাস।।
যাত্রা হবে স্বামীর বাড়ী কবর গোরস্থান।
মনে মনে চিন্তা করে শক্ত তারি প্রাণ।।
হৃদয় কোণে স্বপ্নে গড়া ছোট ছোট ঘর।
আসবে রাখাল বাজবে বাঁশী সেই তো হবে বর।।
পয়সা কড়ি চাই না কিছুই চাই না বড় ঘর।
মন সুপেছি সেই দেবতা হোক না মরুর চর।
হোক বা না সে মাঠের চাষা আমার হৃদয় রাজ।
নাই বা আছে দালান কোঠা নাই বা হীরের তাজ।।
মরতে পথে কণ্ঠে হবে মানিক রাখাল রাজ।
গোরের কাফন দুখ তাতে কি হবে বধুর সাজ।।
সাক্ষী রল মোর এলাহি, হোক না তুফান ভার।
রাখাল ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালবো পরোপার।।


দিনে দিনে দিন যে গেলো আসলো বিয়ের বর।
মোড়ল বাড়ী লোকে ভারি খুশীর সমুন্দর।।
কাজী এল মোল্লা এলো বিয়ের আয়জন।
সারা বাড়ী খুশীর জোয়ার কাঁদছে মণির মন।।
সখী গণে হল্লা করে গায়ছে বিয়ের গীত।
মিলে গেছে রাজকন্যার জীবন সাথি মিত।।
উকিল এল কবুল নিয়ে সাক্ষী দুজন সনে।
দেখেই মণির ঘুর্নি হাওয়া উঠলো হৃদয় বনে।।
রীতি কথা কইল উকিল কবুল বলার তরে।
কোনই কথা কয় না মণি চোখেতে জল ঝরে।।
সখী গণে সবাই বলে, বলরে কবুল বল।
কোন কথা কয় না মণি সব হল নিস্ফল।।


হঠাৎ মনি মাটির পরে জ্ঞান হয়েছে হারা।
সারা বাড়ী থমকে গেছে লোকে স্রোতের ধারা।।
মনির মায়ে কাঁদছে বসে হায়রে প্রলাপ তার।
আকাশ বাতাস থমকে গেছে দুখ যে কত ভার।।
একই মনি এ সংসারে খোদার দেওয়া দান।
তারই ব্যাথা মায়ের হৃদয় ভেঙ্গে হল খান।।
দৌড়ে এল মোড়ল মিয়া বসলো মেয়ের ধার।
দুই নয়নের অশ্রু বাঁধ মানে না আর।।
লোকে করে কানাকানি রাখাল রাজের কথা।
পাগল পারা মোড়ল জাদীর হারিয়ে যাওয়া ব্যাথা।।
বরের বাবা শুনলো কথা বড়ই ঘৃণা ভরে।
উঠলো সবাই বরাত ফেরত চললো আপন ঘরে।।