তুমি হাত ধরেছিলে চুপিসারে,
যেন সন্ধ্যার আলো নরম আঙুলে ছুঁয়ে দেয় নদীর তীর।
সে স্পর্শে ছিল না কোনো উচ্চারণ,
না ছিল প্রেমের অমোঘ শপথের ঘোষণা
তবু আমি জেনেছিলাম,
এই হাত আমার জীবনের গভীরতম স্বপ্নের ঠিকানা।
তোমার আঙুলের রেখায় আমি পড়েছি
গ্রীষ্মের উষ্ণ শোক, বর্ষার নিশ্চুপ কান্না,
আর শীতের গভীরে জমে থাকা সেই অলিখিত কবিতা,
যা কখনো কাগজে আসেনি,
শুধু হৃদয়ের শিরায় শিরায় বয়ে গেছে নিঃশব্দে।
তুমি কিছু বলোনি, তবু বাতাসে ভেসেছিল এক অলক্ষ্য সুর,
যেন আমার বুকের গভীরে জেগে উঠেছিল নিঃশব্দের ভাষা,
যেখানে শব্দের আগে ফুটে ওঠে নীরবতা,
আর ভালোবাসার আগে জন্ম নেয় এক অদম্য সাহস।
তোমার চোখে দেখেছিলাম এক নির্মল বিস্ময়,
যেন জন্মের আগের কোনো পলাশ-রাঙা বিকেলে
জমে থাকা কোমল আলো।
সে বিস্ময় ছুঁয়ে গিয়েছিল আমার সমস্ত ক্লান্তি,
যেমন বৃষ্টিভেজা রাতে, জানালার ধারে বসে,
পুরোনো কবিতার পঙ্ক্তি হঠাৎ ফিরিয়ে আনে গোপন ব্যথার স্মৃতি।
আমি জানি না, সে মুহূর্তে তুমি কী ভেবেছিলে
হয়তো কিছুই ভাবোনি, শুধু চুপ করে ছিলে আমার পাশে।
তবু আমি বুঝেছিলাম,
হৃদয়ের সমস্ত মন্দির একসঙ্গে জেগে উঠেছিল,
আর সেই একটি স্পর্শে আমি শুনেছিলাম
নিঃশব্দেরও একটি গভীর উচ্চারণ আছে।
সময় কেটে গেছে, বছরের পর বছর,
কিন্তু আজও, যখন সন্ধ্যা নামে নিঃশব্দে,
আর দেয়ালে পড়ে একাকী আলোর ছায়া,
তখন মনে হয়
তুমি বুঝি এখনো পাশে বসে আছো,
চুপিসারে হাত রাখছো আমার হাতে,
কিছুই বলছো না,
তবু একটি স্পর্শে উচ্চারিত হচ্ছে
পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসার অলিখিত কাব্য।