সেদিন রাজ সভা ভঙ্গ হবার পর
ছেলেটিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি...
ছেলেটি সভায় সত্য ও সাহসী উচ্চারণে
রাজার দিব্য চোখ খুলে দিয়েছিল,
ভীতু, ফন্দিবাজ,নির্বোধগুলোর হাততালির উর্দ্ধে
গলা তুলে বলেছিল  'রাজা তোর কাপড় কোথায়’?
সে গল্পটি  হয়তো অনেকেরই জানা!
যখন রাজার আদেশে রাজাকে পরানো হয়েছিল
এক অভিনব বস্ত্র,
এই নতুন বস্ত্র ছিল নাকি অনন্য
আর রাজ অনুরাগী সবাই সাধু সাধু উচ্চারণে সভা ভরিয়েছিল,
হ্যাঁ... সেই  রাজ সভার  ছোট্ট ছেলেটিকেই খুঁজছি!
কোথায় পাবো তাকে আজ?
কেউকি দেখেছো তাকে?
তার কি গুপ্ত হত্যা হয়েছিলো?
নাকি পণ্য হয়ে বিকিয়ে গিয়েছিল শিশু শ্রমিকে!
অথবা কাদায় মেখে গিয়েছিলো তার শৈশব...
হয়তো লুকোচুরি খেলতে গিয়ে আর ফেরেনি,
কে দেবে উত্তর ?
তবে এই মরচে পরা সমাজে সে জন্মেছিল,
তারা জন্মায় বারবার...
আসে জলন্ত বহ্নি হয়ে!
কিন্তু এই সমাজের বিষাক্ত বাতাস তাদের ছড়াতে দেয়না!
সত্যের ডালপালা মেলতে দেয়না হয়তো কোনদিন!
দিশাহীন সত্য তারা,
হারিয়ে যায় তারা, চাপা পড়ে সত্য উচ্চারণ...
কিন্তু তাকে যে আজ খুব প্রয়োজন,
রাজা রূপ নির্বোধগুলোর
বিবেকের চোখ খুলে দিতে...
সংগঠিত ভুলগুলো বারবার নির্দেশিত করতে!


বস্তির সব ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজলাম,
খুঁজলাম খেলার মাঠ,শপিং মল, স্কুল...
কাক ভোরের কাগজ কুড়ানো শিশুগুলোর মাঝে,
রুটি চোর তকমা লাগানো শিশুগুলোর চোখে...
খুঁজলাম এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত সবখানে,
জানি এদেরই মধ্যে সে মিশে আছে...
হয়তো ক্ষিদের জ্বালায়
তাদের সত্য ন্যায়নিষ্ঠ জিবখানি কেটে ছোটো  হয়ে গিয়েছে!
কিংবা বাপ মায়ের স্বপ্নগুলোর বোঝা তার পিঠে...
আর কোনোদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে গলা তুলে বলবেনা!
রাজা তোর কাপড় কোথায়...
অর্থাৎ বলিষ্ঠ উচ্চারণে বলবেনা রাজা তোর নিজস্বতা কোথায়?
রাজা তোর সচেতনতা কোথায়?
তোর  বিবেচনা জ্ঞানবোধ কোথায়?
তোর যোগ্যতা...
তবে আমি খুঁজবো  তাকে অবিরাম!
এ রুগ্ণ সমাজ আজ যে তারই অপেক্ষায়...



কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর  একটি লেখা অবলম্বনে
আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস ।