আমি তোমার সোমু বলছি...
কেমন আছো বাবা?
অনেক দিন পর লিখছি।
প্রেসারের ওষুধগুলো চলছেতো?
মাকে বলবে ভালো আছি,
অকারণ চিন্তা যেন না করে।
তোমাদের জামাই বিদেশ গেছে অনেকদিন।
কবে আসবে জানিনা,
মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়।
লিখেছো,আমার কবিতার খাতাগুলো
যত্ন করে রেখে দিয়েছো...
মাঝে মাঝে রৌদ্রে দাও,
যেন নষ্ট না হয়ে যায়!
বাবা তুমি একই রকম থাকলে!
মনে পড়ে, ছোটোবেলায় আমার পুতুল
ভেঙে গেলে, সেগুলো যত্নে সারাতে...
বাবা, খাতাগুলো আর দরকার নেই আমার!
সময়ের সাথে সাথে,আমি যেমন
তোমার থেকে অনেক দূরে।
কবিতার খাতাগুলো তাই!
বুঝি শেষ সময় এসে গেছে!
সেদিন যেমন করে শেষ হলো,
আমার তানপুরাটা,ভেঙে দিল ওরা!
মনে আছে বাবা,সেবার যখন
গানের মাষ্টার বললে তানপুরার কথা,
তখন আমি খুব জেদ করেছিলাম,
তুমি তোমার মেডেল বিক্রী করে  
আমায় তানপুরা দিয়েছিলে...
বুঝিনি তখন,তোমার কতোখানি
স্বপ্ন বিক্রী করে আমার স্বপ্ন কিনেছিলে!
তার মূল্য তোমায় দিতে পারিনি বাবা।
আমার শশুড় বাড়িতে নাকি  
গান, কবিতা এসব আমায় মানায় না।
সেদিন তিনতলা ছাদের জানালা দিয়ে,
কবিতার পাতাগুলোকে উড়িয়ে দিলাম।
নীল আকাশের গায়ে!
ওরা ভাসতে ভাসতে চলে গেল!
কোনো মেঘের দেশে!
কিন্তু দেখো কি আশ্চর্য!
সেদিন বৃষ্টির পর রামধনু দেখলাম,
মনে হলো সবুজ পৃথিবী কথা কয়...
আমি তার উত্তর  দিতে থাকি।
কিন্তু জানো বাবা,
আমি কথা রাখতে পারিনি ওদের...
তবে আর খাতা নয়,
চিলেকোঠা ঘরের প্রতিটি দেওয়ালে দেওয়ালে
লিখে  ফেলেছি মনের সব নীল কথা।
কবিতার রংএ রাঙিয়ে...
যখন প্রতিটি ইঁট শব্দের পর শব্দে ভরে উঠবে,
যখন দেওয়ালের  প্রতিটি কোণ
উপচে পরবে, কবিতার ঝংকারে...
তখন কি করে তাদের আগলে রাখবো বাবা?
যদি ওরা বারুদ হয়ে ঝলসে ওঠে!
অথবা বান হয়ে ভাসিয়ে দেয় সব,
যা কিছু  অজ্ঞান, অন্ধকার,জঞ্জাল স্তুপ।
সব বাঁধা তারা অতিক্রম করে নিজেরা আত্মপ্রকাশ করে...
বাবা, এযে স্বপ্ন আমার!
নিষ্ফল আবেদন...
জানো বাবা, তোমার সোমু স্বপ্ন হয়ে গেছে,গভীর রাতের!


কে সোমু??
এই দেশের প্রতিটি কোণে খুঁজে পাবে এই  সোমুদের,
যাদের স্বপ্ন ভঙ্গের ইতিহাস চাপা থাকে
সভ্যতার ভাঙা দেওয়ালের নীচে।।