পাঠক কবিতা কেন পড়েন? প্রশ্নটার উত্তর হয়তো খুব সোজা। এবং এর উত্তরও সবাই জানে। যখন কেউ কোনো একটা ব্যাপারে ক্লান্ত থাকেন, পরিশ্রান্ত থাকেন বা কোন কারণে মন থাকে বিক্ষিপ্ত, সে সময় একটা ভালো কবিতা হালকা করে দিতে পারে পাঠকের হৃদয়। পাঠক জাগতিক সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন ক্ষনিকের জন্য হলেও। কবিতা, গান ও নাটকের মতোই পাঠকের হৃদয়ে দোলা দেয়।


প্রথম প্রথম আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, "কবিতা মনের আনন্দের জন্যই লিখি।" এখন বুঝি কথাটা হয়তো পুরোপুরি সত্যি নয়। মানুষকে আনন্দ দেয়াও আরো একটা কারণ। কেবল মাত্র নিজের আনন্দের জন্য কেউ কবিতা এ আসরে বা পত্রিকায় বা বই আকারে কোথায় প্রকাশ করে না। অপরকে আনন্দ দেয়াতেও যে আনন্দ আছে এটা কবি মাত্রই জানেন।
এখন প্রশ্ন হলো, আমার কবিতা কেন লোকে পড়বে? সেই আনন্দ টা কি আমি কবিতায় তুলে ধরতে পেরেছি? আমি হয়তো কোন একটা বিষয় বা দৃশ্য ভেবে কবিতা লিখেছি। সেই কারনটা জানি বলেই আমি আমার কবিতায় আনন্দ টা পাই। কিন্তু পাঠক তো আর সেই বিষয় বা দৃশ্য টা আগে থেকেই অবগত নন। পাঠককে কবিতা পড়েই সেটা জানতে হবে। কবিতা লেখার সময় সেটা কি খেয়াল রাখি! ব্যাপারটাকে ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে, আমি কি কখনো আমার কবিতাটাকে সাধারণ পাঠক হিসেবে পড়ে দেখি?
কবিতা লেখার সময় আরো কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখলে পাঠক বাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস।


১. বারবার একই শব্দ বা একই বিষয়ের আবির্ভাব হচ্ছে কিনা কবিতায়। হলে এড়িয়ে যাওয়া। নতুন বিষয় বস্তু নিয়ে নতুনত্ব আনলে পাঠক আকৃষ্ট হন বেশি। যদিও আমার লেখায় এই ত্রুটিটাই পাই বেশি।


২. কবিতার গঠন কাঠামোতেও বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে। বিশেষ করে উপস্থাপনায়। এতে পাঠকের পড়ার স্বাদে ভিন্নতা আসে। পাঠক আকৃষ্ট হন।  এ আসরের সম্মানিত কবি, প্রনব মজুমদারের কবিতায় আমি বিষয় বৈচিত্র ও উপস্থাপনায় ভিন্নতা পাই সবসময়। কবি, সরদার আরিফ আহমেদ এর কবিতায় আমি বিষয় বস্তু ও উপস্থাপন সারল্যতা পাই, যা খুব টানে পাঠ করতে। কবি, মার্শাল ইফতেখার আহমেদ এর কবিতায় আমি অপূর্ব সব শব্দের ঝংকার দেখতে পাই। কবি, প্রণব লাল মজুমদারের কবিতায় আমি উপমার সব চমৎকার ব্যবহার দেখি সবসময়।


৩. কবিতায় যেনো ছন্দটা থাকে সবসময়। সেটা মাত্রা গুনে হতে হবে এমন কোন কথা নেই। কবি সঞ্জয় কর্মকার, কবি কবীর হুমায়ুন, কবি গোপাল চন্দ্র সরকার, কবি জামাল ভড়, কবি এম, এ, ছালাম, কবি শহীদ উদ্দিন আহমেদ, কবি শরীফ এমদাদ হোসেন, কবি আলমগীর সরকার লিটন, কবি বোরহানুল ইসলাম লিটন, কবি রীনা বিশ্বাস সহ আরো অনেকের কবিতায় আমি ছন্দটা পাই খুব করে।
কিন্তু কবিতা যেনো এমন নাহয় যাতে পড়লে বুঝা না যায় এটা প্রবন্ধ না কবিতা! (যদিও আমি আমার কবিতায় এই মুহুর্তে স্বরবৃত্ত ছন্দটাকেই আঁকড়ে ধরেছি। এটাও ঠিক না।)


৪. অন্যের কবিতা পাঠ না করা। আবার পাঠ করে মন্তব্য না করাও, নিজের কবিতার পাঠক বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণ হতে পারে এ আসরে আমার মনেহয়।


আলোচনা টি কেবলমাত্র আমার মতো নবীন কবিদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং নিজ ও অন্যদের কবিতা লেখা সম্পর্কে আরো উৎসাহিত করার জন্যই করেছি।