পুলে বসি আমি, দুলাইছি মোর চরণ খানি-
তারই পাশ দিয়া বহিয়া গিয়াছে বালুকাপুরের তরঙ্গিণী।
মাথা নিচু করি দেখিতেছি এক তরফাপ্রেম কাহানী,
দেখিলে মনে হয় তারে, ভাগ্য পাপী দাদার কাহিনী।
তিনি বলিয়াছেন মোদের, প্রেম বিনা মন আছে কি তোদের ?
তবে শোন, বালুকাপুরের কন্যা সে যে কানে রইছে দুল ;
তারে দেখিয়া করিলাম ভুল , দিয়া দিলাম রক্ত ফুল
ভুল নাহি দেখি তাহারে, কালো ভুরু দীঘল পরীর চুল।
বুকেতে সাহস আনি, তুলিলাম হাত হয় কি জানি।
নাহি দেখিছে আমায়, তাহার হাতটা উঠায় নামায়;
সে যে বরাত চিঠি মোরে ধড়পড়িটা থামায়।
চিঠি মোর হৃদয় খানি, উড়াল দিলো বালুকার গাঁও,
মোর বুকে অপার সুখে, ছাড়িলাম মোর নাও;
গিয়া দেখি মোর দাদি জাপটে ধরিয়া পড়িছে গাও ।
মোর মুখে অপার হাসি, তাহার মন যে কত খুশি,
কহিলাম দাদীরে তাহার বাঁকা চোখে হিয়া তস্করী।
মধুর সুখে দেখি তাহার কপলে ছোট্ট তিল ;
দাদি,তাহারে দেখিলে জুড়াইবে তোমার দিল।
দাদু মোর, তোর তোরে করিয়াছি যত্নে চন্দ্রপুলি-
জিরিয়া 'ল' উদর ভরি, ছাড়িব অজানা গোধূলি।
নাহি থামিয়া ঘরে,পাড়ি দিলাম বালুকার হাটে
বারো আনা পেলাম তরী ভিড়িয়া, জিইয়া লই ঘাটে।
দশ আনার কিনিয়াছি চাদি নুপুর মধুর সুরে হাসে,
হিয়া মোর পড়িছে দিবা স্বপ্নে রবি তেজ নাশে।
ভাবি নাই তব ঘরে ফিরিতে হইবে দাদির তরে,
ফিরিয়া আসিয়া দেখি দাদি পড়িয়াছেন খাটলির উপরে ।
দাদীরে কহিলাম, তুমি ছাড়া আর নাই কেউ ভূ-ধরে,
নিজে তরে ভাবিতে গেনু, সোনামুখে কাঁদায় হনু অপরাধী ;
সবিশেষ কাটিল মোর প্রেমের মৃত্যুরাশির সুর
দাদীরে দিলাম ছুটি, কে ভাঙিল মোর অটুট জুটি।
নাহি কিছু আসে মনে, বালুকাপুরে তার বিহনে,
ভাঙিতে ভাঙিতে গেনু পড়িয়া, নাই ভয় আত্মহননে ।