নেই আজ তোর শিশুবেলা মনে ,
নাড়ি ছেঁড়া ধন পরম যতনে
       বুকে লয়ে আমি লড়েছি ।
কখনো শহরে গলিতে গলিতে
খালি পায় আমি চলিতে চলিতে
        দিন শেষে শুধু বলেছি-
    "ভগবান তুমি, এ বুকের ধন
            ভুবনে এনেছো, দেখো,
                 অভুক্ত থাকি,
    আমার বাছার মুখের ভাত রেখো"।
তার পর কত বাড়ি বাড়ি কাজ
কিছু ভালবাসা দিয়েছে সমাজ ,
কিছু সাথে ছিল নিষ্ঠুর বাণী
        তোর মুখ চেয়ে সয়েছি ।
শুধু দুটো ছেঁড়া রুটি মুখে পুরে
তোকে বুকে নিয়ে রোদ্দুরে পুড়ে
        জীবনের বোঝা বয়েছি।


নররূপী এক দেবতা যেদিন
        তোকে নিয়েছিল কোলে,
লেখা পড়া তোর ভাগ্যে তে দেখে  
আনন্দে রাত ভেসেছে দু-চোখে
         সুখের অশ্রুজলে ।
বাসন মাজার ঝন্‌ঝন্‌ সুর
        নামতার সুরে মিশে,
মায়ে আর ছায়ে খুঁজে পেল তায়
        নতুন সে এক দিশে ।
আমারি মতন  আরও আছে যারা  
ভয় দেখিয়ে বলেছিল ওরা-
     "গরীবের মেয়ে, দিয়ে দাও বিয়ে
                     তবে যদি পাও সুখ"
        শুনিনি সে কথা
           হারাইনি তোর স্বপ্ন মাখা মুখ।
তোর তরে বাছা,
সমাজ সুজন সব বাঁধন আমি ছিঁড়েছি,
সব ভুলে আমি তোকে নিয়ে সুখে
                 ভাগ্যের সাথে জুড়েছি ।


ইস্কুল পাস, ফল হাতে নিয়ে  
পিছে হতে এসে আমারে জড়িয়ে
        আদরে ভরিয়েছিলি,  
টিউশন করে কলেজ পেরিয়ে
আমার কাঁধের ভার কেড়ে নিয়ে
        ভিন্‌ দেশে পাড়ি দিলি ।
সেখানে সে
এক বড় আপিসের বড় মাইনের কাজ,
‘গরীবের মেয়ে’,
মায়ের লড়াই জিতিয়ে দিলি আজ ।

রোজ আসে উড়ে সে দেশের হাওয়া
        আসিসনা আর তুই,
তবু আশা লয়ে চেনা পথ চেয়ে
      আমি যে তাকিয়ে র'ই |
আজও আসে তোর টাকা, আর,
         ক্রমে ছোটো হয়ে আসা চিঠি,
বাছা তোর হাত ধরি বড় সাধ
         ছুঁতে পারি শুধু স্মৃতি ।
আমি আজ তোর স্বপ্নেই মন ভরেছি |
বুঝিস কি তুই ,
স্মৃতির মাঝারে জড়িয়ে তোকেই ধিরেছি ?