আজ থেকে হয়তো পনেরো বছর পর, দেখা হবে আমাদের,
কোনো এক সিগন্যাল এ আমি সিগারেট হতে দাড়িয়ে আছি,
ততদিনে হইতো মাদকের সব অভ্যাস লেগে যাবে।
তুমি তোমার স্বামী আর সন্তানদের সাথে বসে
যান্ত্রিক জানালা দিয়ে উকি দিবে।
প্রথম দেখায় আমায় চিনবেনা।
হইতো বাকিসব বখাটেদের তালিকায় ফেলে দিবে।
কিন্তু ঢাকা শহরের প্রচণ্ড জ্যামে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ কিছু একটা চেনা চেনা মনে হবে।
হইতো আমার চুল কিংবা নির্লিপ্ত চোখের নির্বাক চাহনি।
তারপর হঠাৎ জানলার কাঁচ নামিয়ে নিবে তুমি
আমি প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলবো তোমার সেই সুশ্রী মুখাবয়ব।
চিনতে অসুবিধে হলেও হইতো তোমার দেহ নির্গত শিউলি ফুলের গন্ধ মাখা ঘ্রাণের স্নিগ্ধতায় চিনে ফেলবো
তারপর আমি এক অবাক হাসি হেসে পা বাড়াবো আটকে থাকা শহরের ফাঁকে।
তুমি অস্পষ্টভাবে হইতো ডাক ছুড়বে।
পরে বেশি মায়া হলে হইতো নিজ ড্রাইভার কে বলবে আমায় ডেকে আনতে।
সে গাড়ি রেখে আমার পিছনে ছুটতে শুরু করবে।
এরই মধ্যে জ্যাম ছুটে যাবে।
পিছনের ড্রাইভার গুলো উচু গলায় গালাগাল শুরু করবে তোমার ড্রাইভার কে।
তোমার প্রিয়তম হইতো খানিক বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করবে লোকটা কে?কি দরকার এত ঝামেলার।
তুমি তখন কি উত্তর দেবে?
প্রশ্নটা তুলা থাক তোমার জন্যে,মনের কোনো এক কোণের আঙিনায়।
কিছুদূর যেতেই তোমার ড্রাইভার আমায় হারিয়ে ফেলবে।
সে নিচু মস্তক ফিরে এসে উবু স্বরে জানিয়ে দিবে আমার হারানোর কথা।
তুমিকি তখন খানিক বিরক্ত হবে!?
এটাও তুলা থাক ।
আমি আবার অপেক্ষা করবো সামনের সিগন্যাল এ গিয়ে তোমার।
তুমি আসবেনা আর।
সূর্যের কর্তৃত্ব শেষ হয়ে চাঁদের রাজ্য স্থাপন হবে।
তুমি তাও আসবেনা।
রাত আর দিনের সন্ধিক্ষণ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চাঁদ আবার রাজ্য ছেড়ে দিবে সূর্যকে।
তুমি তখনও আসবেনা।
ক্লান্ত হয়ে ল্যাম্প পোস্টটির গায়ে হেলান দিয়ে নীমিলিতলোচনে আমি দাড়িয়ে থাকবো।
কেমন যেনো অপরিচিত এক ডাকে চোখ খুলে যাবে।
মেয়েলি ডাকটা পরিচিত হলেও কেমন যেনো খুব অপরিচিত মনে হবে।যেমনটা অপরিচিত প্রণয়ের পথ ঘাট।
আমি তোমাকে দেখে আবার মুগ্ধ হবো, পিঠ ফাটা রোদে তৃষ্ণার্থ জলপাত্র হতে জলের পতন দেখে যেভাবে মুগ্ধ হয়। আমি ঠিক সেভাবে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবো।
লজ্জায় তোমার ললাট, গাল লাল হতে শুরু করবে।
এটা কিসের লজ্জা!?
সেই গল্পের শেষ তো বহুদিন!
এখন তুমি দুই সন্তানের মা।
তাও কেনো তোমার চোখে সদ্য আঠারো বসন্তে পা দেওয়া তরুণীর লাজ!
এতটুক লিখতেই মনে পড়ে যাবে;
আমার কাজ আছে।
রোজনামচা টা বন্ধ করে গুজে দেবো জাজিমের নিচে।
চাপিয়ে দিবো আস্ত একটা মস্ত জাজিম।
যাতে সেসব গল্প বেরিয়ে আমায় ছুঁতে না পারে।
তারপর গৃহ ত্যাগ করে হাঁটা দিবো চাকরির উদ্দেশ্যে।
রাস্তার চলমান ব্যস্ততায় শুরু হবে স্মৃতিচারণ।
জাজিমের ভর কেমন যেনো দমিয়ে রাখতে পারেনি গল্পের সবটুকু। মাথায় তুমি ঘুরতে থাকবে।
এই তোমার ঘোরেই দোকান থেকে একখানা সিগারেট নিয়ে দাঁড়াবো খিলক্ষেতের ব্যাস্ত সিগন্যাল এ।
সিগারেটে শেষ টান দিতে দিতে হঠাৎ চোখ যাবে পাশের গাড়ির ভিতরকার এক জোড়া চাতক নয়নের পানে।
দেখবো সেই তুমিই গল্পের মতন হুবাহু প্রিয়তমের সাথে দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে তাকিয়ে আছো আমার দিকে।