বিমল,শুনছিস,,কেমন আছিসরে,,,?
তোদের বাড়িতে আসলাম।মনে আছে যে পথটার মাঝখানে বসে আমি আর তুই দুনিয়াটা ঘুরার মত লাটিম ঘুরাতাম
ঠিক সেই পথটা দিয়ে এসেছিরে,,,শুন সেই মোটা পথটা আর মোটা নেইরে,,অনেক চিকন হয়ে গেছে,,,বিশ্বাস কর দেখলে অবাক হয়ে যাবি কীভাবে অজগর টা এক কেঁচো হয়ে গেল,,,
শুধু পথ না,,এখানে সব কিছুরই এখন এই অবস্থা,চিকন খুব বেশি চিকন"
,বিশেষ করে মন,,খুব বেশি চিকন।যে ধর্ম তলা দেখিছিল তা এখন আর আগের মত নাইরে,ঈদগাহের চারদিকে বেশ উচু দেয়াল দেওয়া হয়েছে,,ইচ্ছে করলেই সেখানে গিয়ে আর বসা যায় না,,সব জায়গায় যেন চিকন এর কাছে হেরে যাবার এক প্রতিযোগিতা।
বিমল,, মনে আছে একদিন লাটিম খেলতে গিয়ে তুই হেরে গিয়ে আমাকে মারতে এসেছিলি,,,তারপর কি হয়েছিলরে বোকা,,,কিছুক্ষণ পর এসে আবার জড়িয়ে ধরে কাঁদলি,শিশুর মত কাঁদলি,,আমি সেই দিনটা কোনদিন ভুলি নি,,আজও না।
আসলে এমন দিন ভুলা যায় নারে,,,কভু না।কিন্তু তোর বাড়িতে আসলে আর ভালো লাগে না নিজেকেই ভুলে থাকয়ে ইচ্ছে হয়,,সেই বিশাল বাড়ি,,সেই বিশাল উঠান সেই বিশাল আম গাছ,,সবই আছে তবু একেবারেই ভালো লাগে না,,,কোন রাহু যেন গ্রাস করেছে সব,, জানিস আম গাছের তলায় আসলেই মনে পড়ে,,
আম গাছের মগ ডালে উঠার তোর কত শখ ছিলো!  আসনা এক দিন আবার আম গাছের মগ ডালে বসে আম খাই, বানরের মত জাম গাছের শাখায় ধুলি,,হাসছিস,,!
হাসিস না হাসিস না জীবনের মগডালে বসে গেলেও আম গাছের মগডাল ভুলি নিরে,,জাল দিয়ে মাছ ধরেছিলাম বলেই স্বপ্ন ধরা শিখেছি,,তোর সাথে গোল্লাছূট খেলেছিলাম বলেই বেশ ভালো করেই জানি জীবনের ছূট।জানিস অফিসে বসলেই ভাবি কত সাঁতার কাটলাম,, হাওরের ঢেউয়ের জলে,,তাই তো সংসারের কোন ঢেউ ঢেউই মনে হয় না,,কিন্তু তুই কোথায় বন্ধু,,যার সাথে সাঁতার শিখলাম সে তুই কোথায় ডুবে গেলি?
তোর মাকে দেখলাম,,ভাতের থালার দিকে তাকিয়ে হাউ মাউ করে কাঁদে? কেন কাঁদেরে,,?মায়ের চোখের কান্না কী তোর ভাল লাগে?সেই কান্নার জল যদি আবার মাটিতে যায় মিশে তাহলে কেমন লাগে,, বল,,তোর মা নিজের মুখে ভাত না দিয়ে কাকের দিকে ছড়িয়ে দেয়,,,আও আও বলে কারে যেন ডাকে,,,তোর কি মনে আছে তোর মা এভাবেই তোরে ডাকত,,,বিমল আয়রে,,,ও বিমল.. আয়রে,,,
তুই তো কাককে কভু পছন্দই করতি না,,,
তাহলে সেই সুরেই তোর মা আজ কাককে কেন ডাকে?
অভাগীর কি মন পাষান হয় না,,মা ছেড়ে পুত্র যদি থাকতে পারে তাহলে পুত্র ছেড়ে মা কেন পারে না,,কেন?


জানিস তোর বাড়িতে যখন আসলাম তখন আকাশে প্রচন্ড রোদ,সূর্যটাও মাঝখানে,,কিন্তু কোথায় যেন তোর বাড়িতে কোন আলোই নেই,,,অন্ধকার,যমরাজের হাতের অন্ধকার।


তোর ভাতিজার কথা মনে আছে,,ওই পাকনা বুলুরে,,যে কাতু কাতু বলে দৌড়ে আসত আমাদের কাছে,,,বল দাও,চকলেট দাও,,বলে নাকু চুমু দিত আমাদের,,,সেই বুলু আমাকে দেখেই দৌড়ে আসল, কিন্তু না কাতু কাতু বলল না এবার!,আমাকে দেখেই  ফিরে গেল গোমরা মুখে,,কেমন জানি অনাথ অনাথ লাগলো ছেলেটিকে?
কাকু কাকু বলা হয়ত শিখে গেছেরে,,কিন্তু কাকে বলবে কাকু?  কাকে?  সত্যি তুই পাষাণরে। এতটুকু বাচ্চাকে ভুলে থাকতে পারিস?মায়া মমতা ভুলে থাকা যায়?
আমিও তো শহরে থাকি,,ভীষন কাজে ব্যস্ত
তাই বলে কী বুলু কাকু ডাকতে পারবে না বিমল?আমি তো মাটির টানেই,মাটির মায়াই ফিরে আসি জন্মভুমিতে কিন্তু তুই!!  হা হা হা বিমল ফিরাও যে এক ভাগ্য!!মায়া মমতায় ফিরে আসাও যে এই দেশে এক ভাগ্য!সেই ভাগ্যের কথায় কথায় বলছি
ঘরের যে চেয়ার টেবিলটায় বসে পড়তি সেই চেয়ার টেবিল গুলি দেখেছিস, আগের মতই আছে,,তোর পড়া বইগুলিও আগের মতই আছে, শুধু ধুলি জমেছে বেশ,,,ধুলি? ধুলি চিনিস? ওইযে যা ঝেড়ে ফেলা দিতাম সেই এখন গুলি দখল করেছে তোর বই, কলম, খাতা!শুনেছি এই ধুলি দিয়েই নাকি স্কুলের বই ছাপানো হয়,পত্রিকায় সংবাদও হয়,


আচ্ছা শুন তোর ভাইকে দেখলাম,,,একাকী লাঙল টানছে উঠানের কোনে।ঠিক যে জায়গা টায় তোদের ঘরের ছায়া পড়েছে ঠিক সেখানে,,,তুই বল একাকী কেউ লাঙল টানতে পারে?
পারবে না কেন,,,কপালের লিখা তো লাঙ্গলের আঁকা পথ দিয়ে আর সরানো যায় না?
তোর বউদি,, যার বিয়েতে তুই খুব নেঁচেছিলি সেই সোনা বউদিরে,,,আমাকে দেখেই দৌড়ে আসল ঘর হতে,,তারপর,,তারপত জানিস কী হয়েছে,,শুধুই হাউমাউ করে কেঁদেছে,,,আমার নাক মুখ হাতিয়ে কেঁদেছে,,,তার চোখের জলে আমার মনের কান্নাটা আর থামাতে পারি নি,,একদম পারিনি,,
তাই ধমক দিয়ে বলেই ফেলেছি,,
এই অলক্ষ্মীর নির্বাচন কেন হয় এই দেশে,,
এই দেশে ভোট কেন দিতে যাও তোমরা,,?
কেন?  কেন? কেন?


জানিস আমার চিৎকার শুনে বুলু দৌড়ে আসল আমার কাছে,, চিৎকারের কম্পনে হয়ত ঘরের চালাটা একটূ কেপে উঠেছিল,, সেও কাঁদতে কাঁদতে বলল,,কাকু ভোট দিতে যায় নি,,আমাকে নিয়ে গিয়েছিল,, আমি বায়না ধরেছিলাম ভোটাভুটি দেখব,,, ভোট  দেখাতে,,,কাকু আমাকে নিয়ে গিয়েছিল,,,,


তারপর আমার দিকে না তাকিয়ে অঝরে কাঁদতে কাঁদতে  বলল কাকু,, আমার কাকু কে এনে দাও,,এনে দাও।বিমল কাকুকে বল রাতে আমি আর বলব না,,কেচ্ছা শুনাতে, বলব না মেলায় নিয়ে যেতে,,দিব্যি বলছি কোনদিনও বলব না ভোটাভুটির পাশের মেলা হতে বাঁশী কিনে দিতে
বিমল আমি কী বলব বল,,আমি কী বলব বুলুকে,,,ভোট দেওয়া না দেওয়ার অপরাধে তুই আজ শান্তির দেশে ভগবানের নিরাপত্তায়,,,কিন্তু তুই যে তোর ভাতিজাকে ভোট দেখিয়ে গেছিস,এই অপরাধ শাস্তি কি হবেরে? কারা আবার দাঁড়াবে দিতে এই শাস্তি? টুপি মাথায় আবার কে হবে শাস্তিবাজ!! তুইতো তোর নিরাপত্তা নিয়ে চলে গেলিরে পাগলা,,,, বুলুদের নিরাপত্তাটা কে দিবে,,কে?বল কে?..