উঠানে বসে থালার ভাত,, মাটিতে ফেলে
ধান চাল,ধান চাল খেলছিলাম অজ্ঞানে সজ্ঞানে।
ও মা হঠাৎ করে চারপাশ হতে আবর্জনার দল
কওয়া নেই,, বলা নেই,,রূপ নিল মহামারীতে।
রূপ নিল মৃত্যুর মত মৃত্যুর কারবারে; যমদূতে!
সে কি যে ভয়ানক কান্ড,,,স্তব্দ হয়ে গেল ঘড়ির কাটা
উড়ন্ত পাখির ডানায় বাসা বাধল বরফের দল
গাড়ির চাকায় পাথর বেধে দিল পথ,,
ঘড়ির কাটাই হারিয়ে ফেলল ঘড়ির শপথ,,
কে যেন তাই মৃত্যুর স্বরে,, করছে,,,বিজ্ঞাপন চিৎকার ,
ওহে মানুষ,,ওহে মানুষ,,,এখন সময় ঘরে থাকার
এখন যে সময়,,,,,, ঘরে রাখার,,,।


তাই চারপাশের দেয়ালে সুন্দর করে
পাখির নীড়ে নীড়ে এঁকে নিলাম ঘর।
রান্না ঘরের রঙ নষ্ট করা তেল আভরণেও
লিখে রাখলাম ঘর।
টেবিলের উপর অনায়াসে দিব্যি দাড়িয়ে থাকা
টেবিল ল্যাম্পটার ধুলির ধুলিতে লিখে রাখলাম ঘর,,।
ঘর লিখে রাখলাম সেলপের ভাজে ভাজে
পড়ে থাকা বইগুলির মলাটের ভেতর,,
বিশ্বাস করো,,,ঠাকুরের আসনেও লিখে রাখলাম ঘর,
ঘর লিখে রাখলাম সিগারেটের প্যাকেটের মাঝে,,
ঘর লিখে রাখলাম চায়ের কাপে চুমুকে চুমুকে,,!
ঘর লিখে রাখলাম দিনপঞ্জিকার ভাজে লুকানো
শুকনো গোলাপের তরতাজা পাপড়িতে।!!
কিন্তু একি ,, একি হাল হল এতদিনে!"
কোথায়ও যে তেমন করে লিখতে পারছি না ঘর,,
কোথায় যে আঁকতে পারছিইনা ঘর"
আতঙ্কে ভয়ে তাই বাথরুম হতে গঙ্গাস্নান করে
শুদ্ধ মনে,,, একেবারে ধৌত বস্ত্রে
গায়ের উপর লিখে রাখলাম ঘর,,পবিত্র ঘর।


না, না তাতেও যে হল না কাজ।
দরজার সামনে,,ওই যে পাপোশ
তার উপর লিখে নিলাম ঘর,,
কিন্তু ঘর,,,,,, সে কোথায়,?
অনাদরে আদরের জিনিস হারিয়ে গেলে
এত সহজে কি আর পাওয়া যায়?
তাই বাধ্য হয়ে কোলের শিশুটিকে কোলে নিয়ে
মাথা রাখলাম মায়ের কোলে,,,
এমন সময় কিছু দূরন্ত পাতা,,
বাতাসের বেগে প্রবেশ করল সাজানো গুছানো কক্ষে
বিড়ালের ছানাটার কাছেও দৌড়ে গেল তার জননী বিড়াল।
টিভির পর্দায় হুট করে ভেসে উঠল রাজপ্রাসাদের দৃশ্য,,
যে প্রাসাদের ভেতর শুধু কুটিরে কুটিরে সাজানো
ছায়া সুশীতল ঘর আর ঘর।


আমার স্ত্রী,, যাকে দিনের বেলা মশল্লার গন্ধ হতে
খোঁজে বের করতে হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে,,
সেও দেখলাম বারান্দায় রেখে দেওয়া ফুলের টবটা
নিয়ে দাঁড়াল এসে পাশে,,
মা তখন বাবার কিনে দেওয়া শাড়িটা পড়েই
হাসলেন কেবল ক্ষীন স্বরে,,।
সিন্দুক হতে বের করে নিলেন
অনেক দিনের পুরুনো এক বোতল সরিষা তেল।
যে বোতলের গায়ে আমার দাদুর দাদুর নাম লিখা
বেশ সযতনে,,,


তারপর সেই বোতল হতে সামান্য পরিমান তেল
মাখিয়ে দিলেন আমার সন্তানের নাভীতে,,
মূখে তার আনন্দের রেখা,,
হাসিতে তার বৃষ্টি ভেজা মাটির,, ভেজা ভেজা গন্ধ
যে গন্ধে গন্ধে হাসতে হাসতেই  বললেন,,,মা
আমারে,,হ্যা হ্যা আমারে,,,


ওরে বোকা,,
ওরে গৃহত্যাগী আধুনিক গৃহ-সন্ন্যাসী জীবিকার পোকা।
ঘর যে থাকে জন্মের এমন আজন্ম চিহ্নতে,,,
মায়া মমতার চাষে চাষে,, পেতে  হয় তার দেখা।


বাইরে ঠিক তখনি শুনলাম মন্দিরের ঘন্টায় ঘন্টায়
মসজিদের আজানের আজানের স্বরে স্বরে।


নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।