একদিন তোকেই বুকে ধরেছিলাম রনু,,
মাটির বুক হতে যেভাবে
ঘাস,লতাপাতা,বৃক্ষের  জন্ম হয়,,,
নিজের বুকে ধারন করে নিতে মাতৃ  শিকড়,,।
ঠিক সেভাবেই তোর প্রথম জন্ম হয়েছিল আমার মনে,,
হ্যা রনু আমার মনে।
রনু বিশ্বাস কর,,তুই গর্ভে আসার আগেই
কুন্তি গর্ভবতী হয়েছিলাম আমি,,,
মা হয়ে গিয়েছিলাম মনে মনে।


এই মন নিয়েই আমি স্পর্শ করতাম হাড়িতে,
হাড়ি বলে উঠত মা,মা ও মা আমি আসছি,,,
আমি তোমাকে মাতৃজন্ম দিতে আসছি,,
আমি বাতাসকে স্পর্শ করতাম আমার ফুসফুস দিয়ে,,,
বাতাস গর্জে উঠত,,
নাড়িয়ে দিত আমার উজান ভাটির উঠোন,,
উঠোন কোনে শুকাতে দেওয়া
আমার ভেজা হৃদয় কাপড়,,
বাড়ির কোনের অতৃপ্ত কৃষ্ণচুড়া গাছ,,
নাড়িয়ে দিত মাটি হতে জল চুষা
নাড়িকেল গাছের সমস্ত স্বপ্ন নাড়িকেল।
নাড়িয়ে দিত আমার
মাথার উপর উড়ে যাওয়া চিরন্তন কাশফুল মেঘ,,
নাড়িয়ে দিত ঠাকুর ঘরের সিংহাসন।
এই নাড়িয়ে দেওয়া এক ভুমিকম্প ছিল রনু
ভুমিকম্প ছিলো,,
সুখের, শান্তির,স্নেহের ভালবাসার ভুমিকম্প।


জানিস এই ভুমিকম্পের আঘাত
কত যে আমার ভাল লাগত,,
তা মরভুমির বুকে আজন্ম তৃষার্ত পাখিও
এক বিন্দু জলের সম্মুখে বসেও জানতে পারবে না।
তোকে কেমনে জানাবরে সে সুখ,,,
আজ তুই বড় হয়েছিস,,
শিম গাছের গোড়ায় জন্ম নেওয়া
সুপারী গাছের পাতাটাই
আজ শিম গাছের সাহারা,,।
কিন্তু এই সাহারাই কি জীবনরে বাবা?
ছায়াটাই কি মায়া?
নাকি অন্যকিছু?


আজ অনেকদিন হয়ে গেলে
বাড়িতে তোর দেহের কম্পনের স্পর্শ পায় না এ বাড়ি।
জানি, তোর শাশুড়ির মত রান্না করতে আমি পারি না,,
তোর শ্বশুরের মত তোর বাবা
তোকে আদর করতে পারেন না,,,
কিন্তু জানিস সব রান্নাই রান্না,,
কিন্তু মায়ের হাতের রান্না,
সব রান্না নয়,,
সব আদরই আদর
কিন্তু বাবার আদর, সব আদর নয়।


এই যে রনুর বাবা, কোথায় আছগো,,,শুনছ,,
টেবিলে খাবার দিচ্ছি,, চলো খেয়ে নেই।


পুত্রের রোজগারের টাকা
এত সহজে উদরে যায় না
তাই বলেই তো একটা বিড়াল পোষে রেখেছি,,
যে বিড়ালটাকে আদর করে প্রতিদিন
রান্না করে খাওয়াচ্ছি
আর বসে আছি কোনদিন এই বিড়ালটাই
এক বাঘ হয়ে খেয়ে নিবে আমাদের,,
এ দিনটা কবে আসবে রনু।
আদরের বিড়াল
মৃত্যুর বাঘ হবে না রনু?
কেন হবে না,,,আদর যত্ন করেই তো
ছোট্ট বিড়ালটাকে আজ বড় বিড়াল বানিয়েছি।
আমাদের প্রাপ্তিটা সে অবশ্যই দিবে?
তাই না রনু?
প্রতিদিন  মৃত্যুর চেয়ে
একদিনের শ্মশানগমন মৃত্যু যে অনেক শ্রেয়।


সন্তানের টাকায় বনজঙ্গলের মাঝে
ভরণপোষণ রত পিতামাতা,,"
সন্তানহীনে
জ্বলন্ত এক চিতা! রে রনু
জ্বলন্ত এক চিতা।
###################
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২৫/১০/১৮