নীলুকে সবাই ভাগ্যবতী বলত,,,
ভাগ্যবতী বলত তার মা,,বাবা,ভাই বোন,,,
পাড়া প্রতিবেশি সবাই,,
ওইত যেদিন দূর্গাপূজা হয়,,
তার আগেরদিন তার বাবা নিজ হাতে
ছোট একটা গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলত,,
ও মা,, ঠাকুরের ঘট হতে এক গ্লাস জলে দেতো,,,,,
সারা বাডিটা শুদ্ধ করে নিব,,
নীলু তখন পড়ার টেবিলে বসে,,
ত্রিভুজের মাপটা মাফতে মাফতে বলত,,বাবা,
তুমি নিজে নিয়ে আসো,না,,
দেখছ না,,আমি ত্রিভুজের পরিমাপটা ঠিক করছি।


বাবা হেসে হেসে বলত,,নারে মা তুই না ছুইলে যে
ঠাকুরের ঘটির জল ঠাকুরের হবে না।
কথাটা শুনে প্রায় সময়ই মেয়েটি হাসত,,
স্কুলে পড়া মেয়ে,,ক্লাসে কতবার শুনেছে
সংস্কার আর কুসংস্কারের কথা,,
তবুও বাবার এই এক অন্ধ বিশ্বাসকে,,অন্ধত্ববলে
বাবাকে যে নিরাশ করবে,,এমন সাহস মেয়েটির নেই।
কোথায় কে জানি বলে,,
আরে ও নীলু,,সব কালি কালো নও লো
চোখের কাজল ও কালো,,কিন্তু
এযে চোখকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়
আলোর পথে।


তাই বাবার কথা মত,,
ঠাকুরের ঘট হতে জল নিয়ে এসে
তুলে দেয় বাবার হাতে,
জেঠিমা যখন বলে,,নীলু কাল লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়ব
তুই পাশে বসে শুনবি তো মা?
নীলু জেঠিমার পাশে বসে লক্ষ্মীর পাচালি শুনে,
ওই তো সেদিন,,হারান কাকু,, যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে
বাদাম ভাজা বিক্রি করে সেও এক মোচা বাদাম
নীলুর মায়ের হাতে দিয়ে বলে গেল,,
বউদি নীলুকে খেতে দিও,,ও খেলে আজো
আমার বিক্রিটা ভালো হবে,,
নীলু সেই বাদাম ভাজি বেশ কয়েকদিন মজা করে খেয়েছে,,,,হাসি ফোটেছে হারান কাকার মুখে।
পরেশ জেঠু,,যিনি বাথের ব্যথায় ভোগেই যাচ্ছেন তো যাচ্ছেন
তার কোমরেও কত বার
বাম হাত বুলাতে হয়েছে নীলুকে,তার হিসাবই নেই,,।
পাশের বাড়ি সূচীর মা,,
সূচীকে নিয়ে কয়েকদিন আগেও
নীলুর সামনে এসে বলেছে,,নীলু ননদী,ওলো নন্দি
জামাইর ঘরে চলে গেলে আর কাকে পাব বল,,
যতদিন আছিস নে তোর ভাইঝি সূচীকে ধর,,,
তোর হাতেই কেবল খায়,,,
আমার হাতে খেতেই চায় না,,,।


অথচ আজ,,,আজ এই নীলুর,,
হাত ছোয়া জলে,, ঠাকুর দেবতার ঘ্রাণ পায় না কেউ
আজ নীলু খুব অত্যাচারী,,,অভদ্র অসভ্য,,
আজ নীলু যদি রান্না করে ভাত,,তাহলে
তাহলে তা নাকি হয়ে যায় পাথর,,
আজ নীলুর জন্য নীলুর দুয়ারে,, দুয়ার নয়
বরং পাওয়া যায় সড়কের পাশে ভাঙ্গা দেয়ালে
কোন কালে দুয়ার থাকার চিহ্ন,,
নীলু আজ বাইরে গিয়ে বৃষ্টির মাঝে দাঁড়ালে
জল শুকিয়ে বৃষ্টি হয়ে যায় আগুন,,
আজ কোন গাছের ছায়ার নিচ বসলে
ছায়া হয়ে যায় উত্তপ্ত খড়ার মাঠ।
আজ নীলু তার পায়ে রূপার নুপুর বাঁধলে
নুপুরো হয়ে যায় লোহার লাল শিকল,,
কিন্তু কেন,,,?
কোন অলক্ষ্মীর ছোঁয়া পেয়েছে নীলু আপনার ভাগ্যে
কোন নরক ঘাটের জলে স্নান করেছে নীলু,,
যে ঘাটের জল সদাই বিষ করে রাখে কোন নাগিন?
কোন আয়নায় মুখ দেখেছে নীলু,,
যে আয়নায় আশ্রয় করে বসে থাকে কোন
অশুভ পেত্নী?
কোন রাজ্যে অজান্তেই সমর্পিত হল,,নীলু
যে রাজ্যের রাজ সিংহাসন দখল নিয়েছে পতুনা রাক্ষসী?
কোন?  কোন শনির দশায় পড়েছে নীলু,,,?
যে দশায় জীবনকে মনে হচ্ছে মৃত্যুর বহর!!
কে তাকে বাঁচাবে,,কে তাকে রক্ষা করবে
এমন রাহুর হাত হতে,,,?কে কে কে?


তাই অব্যক্ত ভাষায় ব্যক্ত নয়নে
চিৎকার করে বলছে নীলু,,
বাবা,,আমাকে বাঁচাও,,
মা,,জেঠি,,হারান কাকা,সূচীর মা,,,
কে কোথাও আছ আমকে বাঁচাও,,বাঁচাও বাঁচাও।


না,, না কেউ বাঁচাতে আসল না,,
নীলুর কান হতে খোলা হল ঝুমকা
কেউ বাঁচাতে আসল না,,
নীলুর ছবির উপর লিখা হল চরিত্রহীনা
কেউ বাঁচাতে আসল না,,
নীলুর মুখের খাবারের উপর ঢালা হল থু থু
না না কেউ বাঁচাতে আসল না,,
নীলুর ঘরের কাপড় ফেলে দেওয়া হল উঠানে
তবু কেউ আসল না,,,
না,, না না,,,কেউ না,,।


তবে নীলু শুধু কান ভরে শুনলো,,
কারা যেন দূরে দাঁড়িয়ে বলছে,,
খানিক দূরে দাঁড়িয়ে বলছে,,
একটা ছেলে দেখ দেখি
তাড়াতাডি নীলু টাকে বিয়ে দিতে হবে।
তা না হলে ননদী হয়ে আপন বউদির ছুঁবলে
নীল হয়ে হয়ে,, মারাই যাবে মেয়েটি,,,।


নীলু নিস্তব্ধ,,, মুখে তার শব্দ গুলি বেশ ভারী
তার পায়ের নিচের মাটিতেও বেশ ফাঁটল,,,!!
দূরে কোথায় যেন দালান গড়ার  শ্রমিক
এই মাত্র মাথায় ইটের বোঝা নিয়ে
দশতলার উপর হতে,,, ধপাস করে পড়ল নিচে,।
বাঁচাও,,বাঁচাও বলতে গিয়েও
পারল না বলতে,,,কিছুই,,
তবে এর মাঝেই আবার শুনল,,নীলু
ননদী হয়ে আপন বউদির ছুবলে না
মারাই যায় মেয়েটি,,
তাই ছেলে দেখো দেখি,,,কেবল একটি ছেলে?


এবার নিজের মনে মনে,,কেন জানি
কিছুই বলতে না চেয়েও বলে ফেলল,,
কেন? কেন?
ছেলেই দেখতে হবে কেন,, এমন সময়ে?
বিদায়ই কি শ্বাস আদায়ের সমাধান
এমন জীবনে?


পাশের ঘরে নতুন বউদির নতুন টিভিতে,,তখনো
স্প্যানের ষাড় খেলার উন্মত্ত আওয়াজ,,
লাল কাপড়ে গুতো দেবার দৃশ্য
উপভোগ করার লাল লাল উন্মত্ত আওয়াজ।
উন্মত্ত আওয়াজ,,,।


হ্যা ঈশ্বর,,হ্যা বিধি,,,
কেউ কি নেই,,নেই কি কেউ
খানিক বন্ধ করতে,,
এমনি বিলাসী আওয়াজের
গুপ্ত রেওয়াজ?


###############
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
১৪/০৯/২০