বাবা,,ও বাবা,আমার কথা মনে পড়ে?
আজ অন্তত সত্য করে বলো বাবা
তোমার কি আমার কথা মনে পড়ে?
জানি তুমি সত্যের চেয়ে মিথ্যাই বল বেশি
আমাকে দেখলেই তোমার বাড়ে
মিথ্যা বলার আরও বেগ।
গায়ে কোন ভালো শার্ট কভু আমি তোমার দেখিনি
অথচ আমার জন্য কিনতে  নিত্য নতুন পোশাক।
যেই জিজ্ঞেস করতাম,, তোমার শার্ট কিনেছ বাবা?
উত্তর কি দিতে মনে আছে?
"ঘর ভর্তি শার্ট রে বাবা,
এত শার্ট কাপড় দিয়ে কি করব বলতো?
যা কাল একটা নতুন শার্ট কিনে নিব আমার জন্য।"
বাবা তারপর কত উৎসব গেল,পার্বণ গেল,,ঘড়িতে বসে
বাড়িতে হুলো বিড়ালটাও বার বার হল বাবা,,,
ঘরের কোনায় লাগানো শিমগাছটা
ঘরের উপর উঠে গেল লাফিয়ে লাফিয়ে
কই তবু তোমার নতুন পোশাকটা আর কিনাই হল না,,,।
বরং মা খুব যত্ন করে তোমার গায়ের
ছেড়া পাঞ্জাবি খান সেলাই করে দিয়েছে,,বারবার।
মা যখন তোমার গায়ের পাঞ্জাবির ছেড়া অংশ সেলাই করত শক্ত একটা পাথরের উপর বসে
আমি তখন মায়ের চোখে
নরম জল দেখেছি,টলমলে জল
কিন্তু যেই আমার দিকে মা তাকিয়েছেন
তখন সেই চোখে আর জল দেখি নি বাবা
আমার গায়ের নতুন নতুন পোষাক গুলি
সেই সব জল শুষে নিত,,,, এক নিমিষে।
তাই বলছি বাবা আজ,, যদি সত্যি কথা বলতে
তাহলে আমিও ঘরের ভেতর ঘর এঁকে এঁকে বলতাম
বাবা,,,ও বাবা,,,বাবা কেমনে হতে হয়
তা আমিও তোমার কাছ হতে শিখে গেছি।
আজ আমিও আমার সন্তানের সামনে
তোমার মত এক বাবা হচ্ছি,,,নিত্য।
আমার ঘরেও বেশ পিতৃ অভিনয় মঞ্চটা
বানিয়েছি শক্ত করে
বাবার মিথ্যে আশ্রমটার সন্ধান
আমি যে জেনে গেছি এত দিনে।
আমি জেনে গেছি বাবা হতে হলে গাঁদা হতে হয় সংসারে।
বাবা হতে গেলে সব কিছু পারার ক্ষমতা থাকতে হয়
হয় আদরে অনাদরে।
বাবা হলে যুদ্ধ করতে হয় পাহাড়ে কিবা সমতলে
বাবা হলে চিন্তার ঢেউ নিতে হয় মাথার পরে,,
আমি জানি বাবা,,বাবা হলে,,
বাবাদের মাথার চুল যায় উড়ে,,
পেট হয়ে যায় অসচেতনতায় বড়,,
বাবাদের সেই সুদর্শন চেহারা ধীরে ধীরে যায় চলে,,
বঞ্চনা কেবল নিজের সাথে নিজের দরবারে।


তাই আজ তোমাকে একটা অনুরোধ করি
সন্তানের সুখের জন্য আর মিথ্যুক সেজো না,,,বাবা
অন্তত আজ আর মিথ্যে বলো না আমার কাছে!!
জানি ফেরিওয়ালা আসলেই,, তুমি কানে শুনো
বাবা বাবা,,আমাকে দুতা তাকা দিব
আমি ততকলেট খাব।
জানি রাত হলেই হঠাৎ করে বুকের উপর হাত দাও,,
দেখ বাবা বাবা বলতে বলতে কেউ তোমার বুকের উপর শুয়ে পড়ল না তো,,
জানি বাবা খেতে বসলেই পাশের পিড়ির দিকে তাকাও
কেউ আবার বায়না ধরল না তো,,
বাবার সাথে খাব,,বাবার সাথে খাব,,
নদীতে স্নান করতে যাবার সময়,, বার বার তাকাও
পেছনের দিকে,,।
গামছা, সাবান হাতে ছোট ছোট পায়ে হেটে হেটে আসছে না তো কেউ,,
বলছে না তো বাবা আমালে তান কলাবে?
বাবা,, ও বাবা জানি তুমি রাতের আঁধারে হুট করে
বসে পড় বিছানায়,,,
পাশে ঘুমানো কোন শিশুর দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকতে চাও একটানা,,
জানি এখনো তুমি কাউকে কাঁধে করে
ঘুরতে চাও এ পাড়া হতে ওপাড়া।
জানি তুমি বাজার হতে আসার সময় পকেটে করে
কারো জন্য নিয়ে আসতে চাও অন্তত একটা চকলেট,
জানি তুমি চাও তুমি বাড়িতে ফিরলেই
কেউ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরুক তোমাকে,,
তুমি চাও তোমার চোখের দিকে কান্নারত চোখ রেখে
আবুল তাবুল দাবীর কথা বলুক কোন বালক বা বালিকা
কিন্তু এসব তুমি কীভাবে পাবে বাবা
তোমার বাড়ির বাছুরটা আজ ষাড় হয়ে
গরুর গাড়ির চাকা টানছে পথ হতে পথে,,।
বাবা কবুতরের বাচ্চাগুলিরও পাখায় গজিয়েছে পালক
উড়াল দিয়েছে দেশ হতে দেশান্তরে
আমিও যে বড় হয়ে গেছি,
আমার মুখে আর দুধের গন্ধ নেই
আমার হাত পা এখন লোহার মত শক্ত
আমাকে রাত্রি বেলা বাইরে যাবার জন্য বলতে হয় না
বাবা আমার সাথে যাবে,,
আমি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিব
বাবা আমি,,চাকরি করি,টাকা কামাই,অনেক টাকা
মাসে মাসে তোমাকে টাকা পাঠাই।
তোমার জন্য রেখে দেওয়া চাকর
আবুলের বেতনটাও পাঠাই ঠিক সময়ে।
তাই তোমাকে সেই বাড়িতে রেখে
চলে এসেছি অনেক অনেক দূরে,,,বাবা
অনেক অনেক দূরে।


এত সব কাজ করতে গেলে দূরে থাকতে হয় বাবা!!
দূরে না থাকলে কি আর
কাছে থাকার কাজ সহজে করা যায় বাবা?
পিতা যদিও পারে,,সন্তানরা তাযে একেবারেই পারে না,।
এমনকি সন্তান বড় হলে পরে
আগের মত কী আর,কারো বাবা দরকার হয়,,, বাবা!!
ছাদে উঠার মইটা কেউই ছাদে তুলে রাখে না বাবা!
মাটিতেই রেখে দেয়,  হেলায়,, অবঅহেলায়
জেনে কিবা নাজেনে।


যাক গে বাবা আমার ঘরে কিন্তু প্রায়সময়ই
বৃদ্ধাশ্রম গানটা বেশ ভালো ভাবে বাজে,,,
যদিও তুমি তোমার ঘরেই আছ,,,কিন্তু ভাবি
তোমার সন্তান হীন ঘরখানা বৃদ্ধাশ্রম হতে কতটুকু দূরে!
বেদনার রঙ সোনার পাত্রে রাখলেই কি
সোনা হয়ে যায়?
কি জানি বাবা,,
এত সব ভেবে ভেবেও যখন চারদিকে তাকাই
তখন দেখি কত পুরাতন দালান ভেঙ্গে
নতুন নতুন দালান উঠছে তরতরিয়ে
এত সব নতুন দালানের নিচ হতেই  আজ বলছি
আজ তোমাকে বলছি,,আমার সন্তান কোলে নিয়ে
বাবা অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়,,  সন্তান হয়ে
জানি বিন কারনে ঘরের ভেতরেই বসে,,,
রাগ করেছি তোমার উপর।
বিন কারনে তোমার উপর হয়েছি বার বার বিরক্ত
বাবা বিন কারনেই ভেবেছি,,তুমি খুব পাষাণ।
ভেবেছি তুমি খুব কৃপণ,,তুমি আমায় ভালবাস না,,
বাবা মনে আছে,,সেই মেলায়
রুপার বাশীটা কিনে দাও নি বলে
কতদিন তোমার সাথে কথা বল নি!
বাবা মনে আছে স্কুলের বেতন
ঠিকমত দিতে পারতে না বলে
কত দিন তোমার সাথে এক থালায় খায় নি ভুল বুঝে।
ক্ষমা করো বাবা,,ক্ষমা করো আমাকে
সন্তান হয়ে চিনতে  পারি নি যে বাবাকে,,
আত্মা হয়ে চিনতে পারি নি,, আত্মার আশ্রয়কে,,,।


কিন্তু  আজ সেই আমার বাবাকেই
চেনাচ্ছে আমার সন্তান
রোজ রোজ তোমার মত বাবা বানিয়ে আমাকে।।।
বাবা জান আমি আমার সন্তানকে কোলে না নিলে
অভিমান করে,,তাকায়ই না আমার দিকে।
তার সাথে কথা না বললে,,ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়
আমার দিকে,,কি যেন বলতে চায় অব্যক্ত ভাষায়।
বাবা আমি আজ তার অব্যক্ত ভাষাটা বেশ ভালো করে বুঝি,,ঠিক তোমার মত,,
আমি তাকে বলি,,কিরে বেটা আমার
তুই যে প্রেসিডেন্ট হবি এই দেশে
কিরে বেটা তুই যে অক্সফোর্ড পড়বি,,
তুই নাম করবি দিকেদিকে,,তুই গান করবি
গান শুনাবি মানুষের মাঝে,,মানুষ হয়ে,,!!
বাবা এত সব কথাকি তুমিও তোমার মত করে
আমাকে শুনাতে তোমার ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্নের মত?
বলনা বাবা তুমিও কি স্বপ্ন ঢেলে দিতে
আমার কানে চোখে,,মুখে?
জানি এর কোন জবাব তুমি দিবে না
তবে আজ অন্তত সত্য বল বাবা
কতটা পাশে চাও তোমার এই সোনামনিকে?
আজ অন্তত তোমার হাতের লাটিকে বলে দাও
কতটা ভর দিতে চাও তুমি তার উপরে
আর কতটা ভর দিতে চেয়েছিলে আমার উপরে?


বাবা আজ অন্তত এভাবেই একটা চিঠি,,,লিখো
অভিমান,রাগ,দুঃখ ব্যথা সবগুলি প্রকাশ করে
আমার ঠিকানায়, ঠিক আগের মত বকাঝকা করে।
ওরে ও বাধাইম্যার পুলা,,শয়তানের হাড্ডি
একবার তো ফিরে আয় ঘরে,,
দূর বহুদূর হতে বাবার মন্দিরে।।
কি বুঝবিরে মরণ জ্বালা!! কি বুঝবিরে তুই
সন্তান যদি না রয় কাছে, হাতের আদরে,,
আয় বাবা,, আয় ফিরে,, বাবার বাহুডোরে।


বাবা,,ও বাবা।তোমার চিঠিখানা পড়ে যদি
আমি এই আমি পড়তে পারি একটি মন্ত্র
অন্তরের অন্তক্ষরণ দিয়ে,,
পড়তে পারি একটি মন্ত্র এক নব্য পিতা হয়ে
প্রাগতিক পিতাদের চরণে,,,
তাহলে বলব,,কেঁদে কেঁদে বলব
চোখের জলে ভাসিয়ে বলব কেবল এই মন্ত্রখানি
পিতাস্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ পিতাহিপরমংতপঃ।
পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতা নমঃ
পিতৃ চরণেভ্য নমঃ।।


পিতৃ চরণেভ্য নমঃ।।,,বাবা,,


ও বাবা,,, পিতৃ চরণেভ্য নমঃ।।।


##########
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২২/০৬/২০