ওর জন্ম বার চলেগিয়েছিল
বার বার পিছিয়ে
এদিন , সেদিন , ওই দিন করিতে করিতে
চলে যাচ্ছিল পঞ্জিকার দিন গুলো
এক একটি বছর হয়ে।
যে বাড়িতে সে আসিতেছিল আনন্দ দূত হয়ে
সেথায় আগেই ছিল টান টান উত্তেজনা।
ঠিক আমার পেটের চামড়াটার টান টান ঢোলকের পর্দার মত।
একবার পেটের ব্যথায় সারাদিন ছিলাম হসপিটালে
স্টমাকে পেইন ছিল সেদিন...
সেদিন থেকেই বুঝি ব্যথা কারে বলে।
তবুও আমি অপেক্ষায় ছিলাম
কবে আসিবে সে ব্যথা,
সেই মরন ব্যথা
তার জন্মিবার কালে।
মরন সম্মুখে দাড়িয়ে যতই আমি করিবো চিৎকার
ততই আনন্দ উৎসব আসিবে কাছে,
নিয়ে তার জন্মিবার অধিকার।


ভেবেছিলাম এই বুঝি আমার শেষদিন আসিলো চলে..
যেদিন হঠাৎ শুরু হলো আমার বিরাট বেলুন পেটে
ওর আসিবার আয়োজন।
আমি মা যে এত কষ্ট পাচ্ছি
সেদিন  তা বুঝিবার
ছিল না তার কোন কারন।
আমার মরন কান্নায় আমার চারদিক
যত হচ্ছিল অন্ধকার
ততই সে পাচ্ছিল প্রাণ
দুনিয়ার আলো দেখিবার।
আসিলো সে আসিলো সে
ওরে আমার বুকের ধন।
মরে গেছি না বেচে আছি
তা নিথর দেহে বুঝিব কেমন?


তবু হচ্ছিল মনে আমার আমি হলাম দুনিয়ার দেবী
মাতৃ জনম যে হল আমার ।
ধন্য হল জন্ম আমার ধন্য হলো মাতৃ জন্ম নিয়ে।
সন্তান যে আমার প্রাণের প্রাণ
তা বুঝিলাম তারে কোলে লয়ে।


অতপর
দিন গেল বছর গেল ; গেল দুটি যুগ
কোথায় যেন আসিলো আমার বঞ্চিত হবার রোগ।
মাতৃজন্ম এসেছিল যে ব্যথার উপহারে
দিনে দিনে তার সুখ কে নিচ্ছিল ব্যথায় ব্যথায় কেড়ে।
আজ আর সে বুকে শুয়ে রাখে না কচি হাত মোর মুখে।
আজ সে খাবারের জন্য কাঁদে না ওঁয়া ওঁয়া করে।
পায়খানা প্রসাব সেতো করে না মোর পরে
আসে না দৌড়ে একবারও মা মা বলে মোর কোলে।
এক বার মোর দিকে তাকিয়ে কারনে অকারনে
হাসে না খিল খিল করে।
ভাষাহীন মুখে বলে না থা দি ধা পা
ধরে না অঙ্গুলি আর শক্ত করে।


এখন ওকে করাতে হয় না গোসল
মাখাতে হয় না সরিষা তেল সর্বগায়ে।
দিতে হয় না কাজল ফোটা
রাখিতে হয় না নজরে নজরে।
তুলে দিতে হয় না মুখে খাবার
মুছাতে হয় না মুখ আচ্ঁলে।
রাখিতে হয় না কোলে ওরে
হাটাতে হয় না হাতে হাত ধরে।
এখন সে চিরুনি দেয় চুলে
মুখে দেয় শীতের ক্রিম আপন হাতে।
আপনি পড়ে আপনার পোষাক
আপনি কিনে আপনার পছন্দে।
ঘরের বাহিরে আপনি যায়
আপনি আসে ফিরে।
এখন সে দূরে থাকে
যতটা থাকিত মোর কাছে।
এখন তার আলাদা সুখ আলাদা দু়ঃখ্
আলাদা জন্ম আমা থেকে।


কি খেতে চায় সে
কেমন থাকিতে চায় সে
তা যে শুধু পড়ে আছে আমার অভ্যাসে।
আজো আমি মাতা আছি
আজো আমি জন্ম নিচ্ছি বার বার।
কিন্তু কোথায় আছে কোথায় গেছে
মরন সম্মুখে পাওয়া
সেই সন্তান আমার।


খাবার টেবিলে বসে তার প্রিয় খাবার গুলি
চোখের জলে খাই আমি।
বলি খা খা ওলো রাক্ষসি
কে বলেছিল তোকে নিতে
এমন মাতৃজনম খানি।


বিছানা তার ছোট্টই আছে , আর আছে কোলবালিশ্।
শুধু সে হয়েছে বড়
দূরে যাবার চাইতেও বড়
ঢেলে দিয়ে মোর মাতৃজন্মে
ফোটা ফোটা
অভ্যাসের বিষ।