আমি দুঃখিত, পত্রলেখা
সকালের নরম রোদের ওমটুকু তুলে রাখার কথা ছিল,
সাথে একফোঁটা শিশিরের কণা
দূর্বাদলের ঠিক মাঝখান থেকে গড়িয়ে পড়তে থাকা
যে জলের বিন্দু আগায় থমকে গিয়ে টুপ করে ঝরে যায়
তা তুলে এনে তোমার ঠোঁটে ছুঁয়ে দেবার কথা ছিল।
তোমার শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটে বর্ষা নামে নি কী তাই
কিংবা খসখসে ত্বকে ওমটুকু আরাম দিতে পারে নি।
সেই যে বর্ষাদুপুরে বাড়ির উঠোনে ভিজেছিলাম- দু'জনে
আকাশ কেমন মিহি সুরে গান গাইছিল- ঝুম, ঝুম, ঝুম
তা আজও একই সুরে একলা ভাবায় আপন মনে।
জানি আজকাল বর্ষার দুপুর তোমার দেখা হয় না
আমিও বিবেক বিকোই চেনা নগরীর অচেনা পথেঘাটে।


আমায় ক্ষমা করো, পত্রলেখা
ধানের খেতের মাঝ বরাবর যে আলটুকু চলে গেছে
ঠিক সেখানটায় তোমাকে হাত ধরাধরি করে
খালি পায়ে হাঁটতে নিয়ে যাবার কথা ছিল।
অথচ আজ বড্ড শহুরে হয়ে গেছি,
ধানখেত হয়ে গেছে পিচঢালা রাস্তা আর তুমি আলসেশিয়ান পোষা এক বদ্ধ নগরীর মখমলের জামা।


শোন পত্রলেখা,
ডাকাতিয়ার বুকে সেই যে মাঝিবিহীন নৌকা চলত
দু'পাশে খুঁটিতে বাঁধা রশি টেনেটেনে নদী পার হতাম
আর তোমাকে চমকে দেবার জন্য
ঝুপ করে পানিতে ঝাপ দিয়ে দূরে চলে যেতাম;
তা আজ স্বপ্নের মতো মনে হয়, যেন নিষিদ্ধ পুরাণ।


মনে কী আছে তোমার, পত্রলেখা
বাঁশতলায় সাইকেল উল্টিয়ে আমার পা কেটে যায়
তুমি কেমন আকুল হয়ে কেঁদেছিলে, আমি হেসেছিলাম
- পাগলী মেয়ে একটা বলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।
আজ তোমার আকুল হয়ে কাঁদার সময় হয় না
আমারও পাগলী মেয়ে একটা বলে
হেসে উড়িয়ে দেবার সময় হয় না।


জানো কী পত্রলেখা,
আমরা আজ বড্ড মুখস্থ মানুষ হয়ে গেছি
পুরনো দিন সেকেলে মনে হয়; যান্ত্রিকতা আষ্টপিষ্টে ধরা
কেবলই একা হয়ে যাই, কেবলই একা মনে হয়।
তোমারও হয় না বলা, আমারও হয় না শোনা
'আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়
পুরনো সেই দিনের কথা যায় কী ভোলা যায়।'


রুবু মুন্নাফ
২৮-০৭-২০১৮
দক্ষিণ বনশ্রী, ঢাকা।