🍁
জীবনব্যাধি ঘোর অমানিশা মোর কাটিবে না কাটিবে না
হাপুস নয়নে এ প্রতীক্ষা মোর কভু ফুরাবে না ফুরাবে না।
পৃথুল বক্ষের অবারিত পুষ্পক নিয়ত নির্বেদে ঝরে যায়
অর্বুদ ক্লিন্নতার এই বিদীর্ণ হৃদয় কত শতবার টুটে যায়।


কোথা আছো এখন কোন নগরের মহাপথে হাঁটছো তুমি
অতলান্ত মাথুরে প্রনষ্ট হয় রোজ মিদ্র কাননের এই ভূমি
পলে পলে আজ ব্যাধি অমল অজর বিষধ্বনি থরেবিথরে
নিশীথ রাতে হৃদয় নাচে ম্লায়মান দুপুরের ম্লিন সুরে সুরে।


শ্যামল মৃত্তিকার ক্লেদ নয়নে আমার তুমি সদূর দূরবিনী
দাঁড়ায়ে নিশুতি যামিনীর তীরে তুমি মোর স্বপ্ন সঞ্চারিণী
হৃদয়বহ্নি দাউদাউ জ্বলে নিঃসীম আকাশ আজ নিদ্রাহীন
অচিকিৎস্য ব্যাধি শরীরে এখন বাঁচিতে নারি তুমিবিহীন।


কেনো করো বঞ্চিত অধমেরে ওষ্ঠে ধরে রাখো অমল সুধা
হৃদয়ে মোর অজস্র হাহাকার কেনো বাড়াও বেদনার ক্ষুধা
কেনো হও তুমি এত অকিঞ্চন শরীর তোমার সমুদ্রঋদ্ধ
যে পাবে তোমার পিনদ্ধ বক্ষ সে কি হতে পারে কভু অশুদ্ধ?


🍁
সমুদ্রঋদ্ধ শরীর তোমার, তুমি প্রেমের জীবন্ত আরতি
তোমাকে দেখে উত্তীর্ণ তেত্রিশে প্রেমিক হলে কি ক্ষতি
পুষ্ট ওষ্ঠে ধরে রেখেছো নাক্ষত্রিক সুধা যৌবন অঢেল
বিস্তীর্ণ আকাশে পুঞ্জ মেঘগুলো ভেসে বেড়ায় একেল।


এমন করে কে সৃজিয়াছে তোমায় এমনই অপরূপ দৃষ্টি
বিশুষ্ক ভূমি হতেও আছি রাজি যদি তুমি হও স্নিগ্ধ বৃষ্টি
তুমি হাঁটলে মনে হয় বৃক্ষেরা হাঁটে ফোটে শত শত ফুল
উদাস সমীরণে কাঁপে থরথর হৃদয়ে লাগে সহস্র দোল।


শ্যামল অঙ্গের উছল প্লাবনে গায় গান আদিম পাখিরা
বিজন পথে নিশীথ রাতে জেগে থাকে বিষাদ আঁখিরা
ওগো কৃষ্ণা, দলিত মথিত হৃদয়ে কেনো বাড়াও তৃষ্ণা
জিজীবিষা নেই আর, গলিত গভীর মাঝে আজ বিতৃষ্ণা।


দিগন্তপ্রশান্তি মুখ তোমার, দূষণের ভিড়ে কীভাবে হাসো
একলা শহরে মনখারাপে ওগো রঙিন তুমি কাছে এসো
জেনেছি গভীরে তুমি এলেই কেটে যাবে এইসব আঁধার
সুখে যেমন দুখেও তেমন তোমাকেই শুধু আমৃত্যু দরকার।


🍁
ওগো হরিণী, ধাবমান হরিণী, চিতা নই প্রেমিক আমি
আমাকে গ্রহণ করো, পুষ্ট চুম্বনে তুমি করে নাও দামি
গলিত সময়ের কাছে তুমি ছাড়া নেই কোনো প্রার্থনা
শুদ্ধ মননের প্রতীক তুমি করি রোজ তোমারই বন্দনা।


তুমি সদা নির্মল নিষ্প্রাণ নদীকেও দাও সোমত্ত যৌবন
তুমি জীবন অঢেল অজস্র বিমল ফুলে ভরে দাও কানন
ক্লান্তিতে ক্লান্তিতে যখন ভরে উঠে মন সদা বৃথা জাগরণ
সঞ্চয়ঋদ্ধ শরীর তোমার তুমি ঢেলে দাও বসন্ত আগমন।


জলে আগুন নিভে, এই প্রেম এই সমুদ্র কীভাবে নিভাব
বসন্তরিক্ত হৃদয় মোর, এত ভালোবাসা কীভাবে শুধাবো
বেদনাসিঞ্চিত হৃদয়ে তুমি দান করো অবারিত হেমসুধা
ওগো হরিণী, মায়াবী হরিণী, হৃদয়ে আমার সুতীব্র ক্ষুধা।


দমনের শিকল ভেঙে যায়, ইচ্ছে করে তোমার প্রেমে পড়ি
ইচ্ছেরা ইদানীং ভীষণ জ্বালায়, কীভাবে তোমার প্রেমে মরি
তোমার মাথুরে চঞ্চল মন সারাক্ষণ ভুগে অব্যর্থ অসুখে
তোমাকে যে একবার দেখে সুখ তার পরিণত হয় শোকে।


🍁
আয়নায় নিজেকে খোঁজার ছলে তোমাকে খুঁজে বেড়াই
আয়নায় নিজেকে খোঁজার ছলে দেখি তুমি কোথাও নাই
আয়নায় কেউ নাই কেউ নাই তবু খুব নীরবে থেকে যাও
আয়নায় কেউ নাই কেউ নাই তবু তুমি রোজ তীব্র পোড়াও।


এই সন্ধ্যায়, তোমাকে ভীষণ চাই কিন্তু কোথায় তোমায় পাই
এই সন্ধ্যায়, বিষণ্ণ চারিদিক তবু শুধু তোমাকে খুঁজে বেড়াই
এই সন্ধ্যায়, এত ভিড়ে এত বিষাদে কিছু একান্ত সময় চাই
এই সন্ধ্যায়, তোমাকে খুঁজতে গিয়ে তোমাকে তীব্র হারাই।


বসন্ত এসেছে আবার, চারিদিকে কেনো এত সাজসাজ রব
বসন্ত এসেছে আবার, তুমি কেনো শুনো এত এত গুজব
বসন্ত এসেছে আবার, পুড়ার অধিক পুড়িনি কি আমি রোজ
বসন্ত এসেছে আবার, হারালে কি নিতে হয় না কোন খোঁজ?


এই রাস্তায়, কেনো এত কষ্ট নিয়ে আজও রক্তাক্ত হয় হৃদয়
এই রাস্তায়, কেনো পা পাড়াতেই গভীরে জাগে এক বিস্ময়
এই রাস্তায়, সুতীব্র বেদনা বুকে পুষে তোমাকে খুঁজে দুচোখ
এই রাস্তায়, তোমাকে না-দেখার অভাবে বাড়ে রোজ অসুখ।


🍁
চারিদিকে বৃষ্টি, শত শত দৃষ্টি, তোমাকেই শুধু খুঁজি
থইথই মাঠে, হাটে আর ঘাটে, তুমিই হৃদয়ের পুঁজি
দুপুরের পথে, চায়ে আর কফিতে, সবখানে শুধু তুমি
আঁধারে আলোতে, মেঘের মেঠোপথে, বাজাও দুন্দুভি।


শত শত বিষাদ, সহস্র অবসাদ, ভাবতেই তোমার কথা
চারিদিকে ব্যাধি, ব্যথা নিরবধি, তবু ভেঙে যায় নীরবতা
এই রাজধানীতে, কোটি কোটি ভিড়ে, তোমাকেই তীব্র চাই
যেতে যেতে পথ, ফুরায় না এই পথ, রোজ তোমাকে হারাই।


হারানোর শোকে, সুতীব্র অসুখে, হচ্ছি আরও একাকী
এত এত বেদনা, শত শত যন্ত্রণা, কীভাবে ভুলে থাকি
রোজ রোজ হাতগুলো, গুটিয়ে হররোজ, কাটাই দীর্ঘ রাত
আমার অন্ধকারে, আহারে আহারে, উঠবে না কোনো চাঁদ।


তবুও ইচ্ছে হয়, যদিও ভীষণ ভয়, একসাথে করি ঘোরাঘুরি
তবু ইচ্ছে হয়, তীব্র সংশয়, তোমার আকাশে করি ওড়াউড়ি।
থাকো তুমি সুখে, আমার শোকে-অসুখে, হৃদয়ের পারিজাত
আছি ঢের বেশ, বুকভর্তি ড্যাশ, কেনো কেনো হলে বেহাত?