তুমি ছিলে তখন বালিকা
আর আমি ছিলাম বালক।
আমাদের রক্তে ছিলো অভিসারের অভ্রভেদী নেশা
আমাদের দু'চোখে ছিলো যৌথ সাঁতারের প্রতিশ্রুতি
একটি মামুলি গোলাপ পেলেই তুমি উচ্চণ্ড মোহিত হতে
যেকোনো সাধারণ কবিতায় তুমি ঠোঁটে এঁকে দিতে চুম্বন
যে কোনো বেদনার গল্পে তোমার হৃদয় হতো ক্ষত-বিক্ষত
সামান্য অবহেলা পেলেই অভিমান পুষে রাখতে তুমুল।


তুমি ছিলে তখন বালিকা
আর আমি ছিলাম বালক।
ঘনঘোর অন্ধকারে হরিণের আয়ু ফুরাতে ফুরাতে
তোমার শুভ্রনীল হৃদয় কোথায় নিরুদ্দিষ্ট হয়েছিলো?
তুমি কি তখন বালিকা আর নারী হওয়ার মধ্যবর্তী
বেদনায় ভুলে যেতে চেয়েছিলে সেই বালককে
যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো রৌদ্রে
তোমার কণ্ঠে উদীরিত প্রতিটি শব্দে হতো আলোড়িত?


তুমি ধীরে ধীরে সাবালিকা হলে
আর আমি সেই সুবোধ বালক।
রাত্রিস্নাত ঘাসের উপর শুয়ে তুমি আর মোহিত হতে না
সস্তা হোটেলের রুটি আর চায়ে ছিলো না কোনো বিস্ময়
খোঁপায় গুঁজে দেওয়া ফুল তুমি ছুড়ে ফেলতে অকারণে
কথায় কথায় তুমি বিদীর্ণ করতে আমার প্রশীর্ণ হৃদয়।


কোনো এক ঝড়ে বনস্থলী জীবনের স্বাদ ভেঙে যেতেই
তুমি হয়ে উঠলে নারী আর আমাকে ছুড়ে দিলে খাদে।
যৌথ মরণের প্রতিশ্রুতি ভুলে তুমি চলে যেতে না যেতেই
ভেতরের সেই বালক অতলান্ত যন্ত্রণায় গিয়েছিলো মরে!
কতটুকু দহনে পুড়েছি আমি সে কেবল আমিই জানি
কতটুকু অশ্রুতে ভেসেছি রোজ সে কেবল দু’চোখ জানে
কতটুকু অস্থিরতা আর হাহাকার বুকে নিয়ে খুঁজেছি
তোমায় গলি আর ঘুঁজিতে সে কেবলই এই হৃদয় জানে।


অনেক দ্বিধা আর সংশয়ে নারী হয়ে উঠেছিলে
অনেক কষ্ট আর যন্ত্রণায় আমিও পুরুষ হলাম।
আমিতো চেয়েছিলাম আমৃত্যু বালক থাকতে
কোন এক সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে তোমার গল্প শুনতে
কোন এক পাহাড়ে শুয়ে রাত্রির নক্ষত্র পরখ করতে
এতটুকুই চেয়েছিলাম পৃথিবীর অন্তহীন জটিলতার মাঝে।
একটি সাধারণ ফুলের ঘ্রাণে তুমি মোহিত হবে
একটি সাধারণ শাড়িতে তুমি বসন্ত হয়ে উঠবে!


তুমি বালিকা থেকে নারী হলে
আর আমি বালক থেকে পুরুষ।
কানাডার আকাশে তুষার ঝরে পড়লে
এখানে কারও দু'চোখ হতে আজও জল ঝরে।
কতটা রাত পুড়লে নারী হওয়া যায় আমার তা জানা নেই
কিন্তু কতটা রাত দগ্ধ হলে পুরুষ হওয়া যায় তা আমি জানি।
চারিদিকের সুদৃঢ় পুরুষ মননের গভীরে তোমার কথা মনে হলে আজও ভেতরের সেই বালক তোমাকেই খুঁজে!
ঝকঝকে জীবনের ভেতরে ওগো নারী ওগো প্রেম তুমি কি
কাছে গেলে বরফ একটু তাপ পেলেই হও জল?