স্কুল তার লাগেনা ভাল, মনে শুধু দস্যিপনা
বইগুলো যেন তাকের উপর তুলে আছে ফণা!
হারু পারু মাঠে গরু চরায়, তারা কত সুখে,
গুলিলাঠি, মার্বেল খেলে, খোলা মাঠের বুকে।
বইয়ের বাঁকা অক্ষরগুলো ঢোকেনা তার মাথায়
গরল যেন ছিটিয়ে আছে বইয়ের পাতায় পাতায়।


ফোর্থ স্যার বেঞ্চের নীচে মাথা ধরেছিলেন ঠেষে
পরদিন স্যারের দাড়ি ধরে টেনেছিল স্কুলে এসে।
একদা তাকে পিঁপড়ার ঝাঁকে রেখেছিলেন দাঁড় করে,
সেদিন দৌড়ে পালিয়েছিল স্যারের মাথায় ইট মেরে ৷
স্কুল থেকে পালিয়ে মিশেছিল রাখাল দলে
বাবা-মা ভাবেন ছেলে মোদের ঠিকই যায় স্কুলে।


হারু'রা পাখির বাচ্চা আর ডিম খোঁজে ওই বনে
পরের গাছের ডাব, নারকেল, আম পাড়ে ক'জনে।
ওদের সাথে মিশতে তারও খুব ভাল লাগে
গ্রামজুড়ে দুরন্তপনায় ওরা ক'জন আগে।
পরের ক্ষেতের ছোলা, মসুর, দুপুরে করে হড়া
হাত পুড়িয়ে, ফু-তে উড়িয়ে খেতে মনকাড়া।


ফুটবল, গোল্লাছুট আরও খেলে খপরার নৈ
স্কুলে গেলে স্যারে মারে, ভাল্লাগে না বই।
পাল্লায় পড়ে খেয়েছে কত কুমড়ো ডাটার বিড়ি
নীলিম নয়নে আজ শুধু হাতড়ায় স্মৃতির সিঁড়ি।
খোলা মাঠে গলা ছেড়ে গান গায় আনন্দে
দুরন্তপনায় কাটে এভাবে সকাল হতে সন্ধে।


সারাটাদিন তাদের কেউ নেয় না খোঁজ খবর
রাখালদের সাথে বাড়ি ফেরে, বেলা হলে অবর।
সন্ধেবেলা সহপঠীরা যখন পড়তে বসে বই
পরের হাঁস-মুরগী, কবুতর চুরি করতে বেরোয় ৷
তা বেচে মাঝে মধ‌্যে সিনেমা দেখতে যায়
আরও কত কিছুতে ওদের জুড়ি নাই।


কার গাছে কি পেকেছে ক'জন রাখে খোঁজ
এসব নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় নালিশ পড়ে রোজ।
এভাবেই কেটে গেল তার শৈশব ও কৈশর
এবার সে যুবক হল, কাটল চোখের ঘোর।
স্কুল, বই, সহপাঠীদের রেখে এল অতীতে
বাবা-মা বড় ভাবি, চায় না খেতে দিতে।


বুঝে গেল সে তখন হয়ে গেছে বড়
কাজ কিছু তো করতে হয়, মনটা করে দড়।
লেগে গেল কৃষি কাজে, দিন মজুরের দলে
ফাঁকির দিন শেষ মনা, পড়েছে এবার কলে!
ক'দিন পরে সংসার হল, বাচ্চা হল কয়েক
আস্তে আস্তে বৃদ্ধ হল, তারা হল লায়েক।


এখনকার বাচ্চারা আর গরু চরায় না মাঠে
পড়ে, খেলে, ল্যাপটপ আর কম্পিউটার ঘাটে।
পরের গাছের ফল-ফলাদিও হয়না চুরি তেমন
খোলা মাঠও নেই, সব বদলে গেছে কেমন!


নাতি তাকে বলল দাদু তোমার ফেইসবুক আছে?
বলল দাদু, সে আবার কি! তা কী ধরে গাছে?
শুনে নাতি কলকলিয়ে হেসে উঠল তবে
আজও দাদু বৃদ্ধ হয়েও রয়ে গেল শৈশবে!


শার্শা, যশোর।
২০.০৭.২০১৪ খ্রিঃ