(বিঃ দ্রঃ যারা পাতায় আসবেন তাদের কাছে আমার বিনীত
অনুরোধ অবশ্যই সম্পূর্ণ লেখাটি পাঠ করবেন, ধন্যবাদ)
মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফিরছে রাখাল দল
দূর নীলিমায় নীড়গামী পাখিদের কোলাহল।
বন্ধুরা ক'জন, মেঠো পথে খেলছি ডাংগুলি খেলা
কেউ বিয়ারিং-য়ের গাড়ি চ'ড়ে, কেউ পীছে দেয় ঠেলা।
গোঁধূলী ক্ষণে, ধূলো উড়িয়ে আসছে ক'খান গাড়ি
বউ আসছে! বউ আসছে! মুখর পাশের বাড়ি!
আমরা আদুল গায়ে, ছুটছি তার পীছে পীছে
হাঁটুমগ্ন ধূলোয় সবে, সাঁঝ আকাশের নীচে।
ঢুকল গাড়ি বাড়ি, মাটিতে পড়ল রাঙা পা
খুশিতে তখন উঠল মেতে আমার পাড়া গাঁ!
বরণ হল বধূ, তুলল ঘরে নতুন অতিথিকে
রঙিন মেঘে আবীর ছড়ায় চতুর্দিকে দিকে।
নদীর ঢেউয়ের স্রোত ভেঙে, আমরা খেলা ফেলে
কজন গিয়ে মুখ ঢোকালাম, হাঁটু কোমর ঠেলে।
শ্বাশুড়ি মা ব্যস্ত খুব, দিচ্ছে গজা-মুড়ি খেতে
আমারও কিছু নিলাম সেথা নির্লজ্জের হাত পেতে।
ছেলে-বউ দুজনই পেল মনের মত সাথী
সময় গড়াল, পৃথিবীকে আছন্ন করল রাতি।
ক'দিন পরে বৌয়ের কোলে আসল নতুন চাঁদ
জীর্ণ কুঠির পূর্ণ হল, ভাঙলো খুশির বাঁধ!
ক'দিন পরে চাঁদের কণা দিতে শিখল হামাগুড়ি
আরও ক'দিন পর পাড়া মাতায় ক'রে দৌড়াদৌড়ি।
যতদিন বোল ফোটার না আসে তার সময়
কাটেনা বাবা-মায়ের মনের গভীর সংশয়!
শখ করে বাড়ির সবাই নাম দিল তার হাসি
হাসি এবার শিখল হাঁটা, দেখল গ্রামবাসী।
যে হাসি পাড়ায় কারো বাড়ি, খাওয়ার সময়
হাজির; বাড়িওয়ালা আদর করে তারে খাওয়ায়।
হাসির দাদী খুঁজতে বের হন, দেখেন অন্যের ঘরে
লজ্জা পান; বলেন " এত যন্ত্রণা তোর জন্যে ওরে!"
কখনও বাচ্চারা পড়া করে, মাস্টার মশাই'র বাড়ি
সেখানে এসে হাসি অপলক নেত্রে থাকে দাঁড়ি।
কখনও মাছ-তরকারী কাটছে কোন বধু; তার পাশে
দৌড়ায়ে এসে হাসি ব'সে ফ্যালফ্যালিয়ে হাসে।
সারাটাদিন বাড়ির সবাই হয়ে যায় ভীষণ উত্যক্ত
পাড়ায় আবার কেউ আছেন, হাসির খুব ভক্ত।
কোনদিন কারো রান্নাঘরে, প্লেট নিয়ে হুট করে
আপন বাড়ি ভেবে খেতে বসে আসন 'পরে।
আমাদের হাসি বোঝেনা কে আপন কে পর
হাসির কাছে আপন যেন এ গাঁয়ের সব ঘর!
এভাবে হাসি, হাসি দিয়ে পাড়া মাতিয়ে রাখে বেশ
অনেক লোকের বিরক্ত লাগে, বলে দেখব শেষ!
কখনও হাসি রাখালের সাথে চলে যায় দূর মাঠে
দূরন্ত এই হাসি আবার খেলা করে পুকুর ঘাটে।
দাদী তাকে সারাক্ষণ রাখে চোখে চোখে
কখনও বা বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায় লোকে।
বসয় তার তিন চার হল ফোটেনা তবুও বোল
বাড়ির সবাই চিন্তিত, নীরব মায়ের কোল!
একদা প্রতিবেশী কেটে রেখেছে বাথরুমের গর্ত
হঠাৎ হাসি পড়ল তাতে, কেঁপে উঠল এ মর্ত্য!
হারিয়ে গেল হাসি, সবাই বেরুলো তার খোঁজে
কোথাও তাকে পাবে না, গর্তে পড়ে আছে ও যে।
দুদিন পর গর্তের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একজন
হঠাৎ কিছুর আওয়াজ পেয়ে দাঁড়াল কিছুক্ষণ।
গর্তের ভেতর কার বাচ্চা? শুধায় সেথা থেকে
দাদী বলে আর পারি না আগলে রেখে রেখে!
হায় কত কষ্ট মনে! হাসি দুনিয়ায় এল বোবা!
সারাক্ষণ দাদী পাহারা দেয় পাশের পুকুর-ডোবা
হঠাৎ একদিন হাসি, সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে
হাবু-ডুবু খেল খুব, তাও নিজেদের পুকুরে গিয়ে।
বাড়ির সবাই নাজেহাল এই হাসিকে ধরে রাখতে
এ যাত্রায়ও গেল বেঁচে, পারিনা অশ্রু ধরে রাখতে!
পাড়ার বাচ্চারা রোজ যায় শামুক কুড়াতে বিলে
শামুক কুড়ায়ে কোলাহল করে বাড়ি ফেরে সবে মিলে।
হঠাৎ একদিন হাসি মিলল তাদের দলে
শামুক খুটতে তারা নামল ক'জন জলে।
যেখানে তারা শামুক খুটে, সে জমিগুলো ধানী
বিলের ধারে উচু ধান ক্ষেতে হাত খানিক পানি।
হাসিও তাদের পীছে পীছে ঘুরছে ধানের ক্ষেতে
ধানের পাতায় পা জড়াল, পড়ল হাসি এতে!
বাচ্চারা সব কোলাহলে ব্যাস্ত, হাসিকে গেল ভুলে
জলের মধ্যে ডুবল হাসি, কে আনে তাকে তুলে।
বাচ্চারা শামুকের ডালা নিয়ে ফিরল সবাই ঘরে
হাসির কথা ভুলে গেল, জানলও না কেউ পরে।
তাদের সাথে হাসি মাঠে গেল, কেউ রাখে না খোঁজ
হাসি তাদের হারিয়ে গেছে, খুঁজতেই থাকে রোজ!
পেপারে নিখোঁজ সংবাদের দেওয়া হল বিজ্ঞপ্তি
সারা এলাকায় মাইকিং করেও ফল হল এক রত্তি।
কোথায় গেল হাসি মোদের, বাড়িতে কান্নার রোল
সবার চোখে অশ্রু ভরা আর মায়ের শূন্য কোল।
জান তোমরা আমার হাসি কোথা গেল উবে?
গাড়ি চাপা পড়ল নাকি মরল পানিতে ডুবে?
ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক গেল এল অঘ্রাণ মাস
আমন ধানের পাকল মাঠ, মরল পথের ঘাস।
মাঠে মাঠে ধান কাটার লেগে গেল ধুম
আজও সবাই অনিশ্চিত, চোখ দুটি নির্ঘুম!
যে জমিতে হাসি আছে এবার কৃষক তাতে
কাটতে গেল ধান একদিন শিশির ঝরা প্রাতে!
যেখানে আমার হাসির দেহ হয়ে গিয়েছিল ম্লান
সেই খানে বেশ তরতাজা হয়েছে ক গোছা ধান!