কেবলমাত্র মাগরিবের আজান হল পাড়ার  মসজিদে
পশ্চিমাকাশে মেঘ-সূর্যের লুকােচুরি নাড়া দেয় হৃদে।
নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদ প্রাঙ্গণে মুসল্লিদের ভীড়
কেউ কেউ করছে অজু কারো মসজিদে প্রবেশ ধীর।


রাখালেরা গরু পাল নিয়ে ধূলো উড়িয়ে পথের
বাড়ি পানে আসছে ধেয়ে, মুখে ছাঁপ আহতের।
ঈদগাহ পাশে বেণুবনে শালিকের বিকট আওয়াজ
রাত্রি যাপনের জন্য ওরা করে সান্ধ্য কুচ-কাওয়াজ।


ঈদগাহ মাঠের ছেলেরা খেলা  ভেঙে  সবে
যার সেই বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে তবে।
বন্ধুরা ক'জন বাড়ি সামনে সবজি ক্ষেতের আলে
পা ঝুলিয়ে  বসে  আছি  সময়  কাটাবার তালে।


হঠাৎ  ওপাড়া  থেকে  কানে  এল  কান্নার  শব্দ
আভাস পেয়ে মনটা আমাদের হয়ে গেল নিস্তব্দ।
আসর ভেঙে আমরা কজন পা বাড়ালাম সেথা
দেখি একটি শিশুর লাশ নিয়ে সবে ঘিরে হেথা।


পউষ মাসের দিন, উঠানের কােণে ইয়াকুবের বউ
রাতের খাবার করছে তৈরী, বারান্দায় পড়ছে মৌ।
সাত বছরের মৌ ইয়াকুবের একমাত্র মেয়ে
সে রঙিন প্রজাপতির মত বেড়ায় নেচে গেয়ে।


মা বললেন "ঘরের ভেতর তেলের বোতল আছে
সেথা  গিয়ে  ওটা একটু এনে দে  আমার কাছে।
মাটির দেওয়াল, টালির ছাউনী বেশ উচু ভীত
পউষ মাসের সন্ধ্যাবেলা পড়ছে  একটু শীত।


মেয়েটি সদা গলায় একখান ওড়না রাখত জড়িয়ে
তেলের বোতল নিয়ে ঘর থেকে এল সে বেরিয়ে।
বারান্দা থেকে নামতে নিয়ে যেই পা রাখল উঠানে
গলার ওড়না গেল সরে, সে  পিছনে ছুড়ল সটানে।


চালের বাতায় পেচিয়ে গেল ওড়নার শেষাংশ
পা দু'খানি পেল না মাটি, ঝুলে গেল  নৃসংশ!
কিছুক্ষণ বাদে ভাবছে মা, কেন আসে না ফিরে!
মনের মাঝে শঙ্কা বাড়ায়, উতলা মেয়েকে ঘিরে।


পেছন ফিরে দেখে মা, ঝুলছে মেয়ে চালে
পউষ মাসের দিনে তার মেঘ জমল ভালে।
মৌ এর বাবা হাটে গেছে সদয় পাতি  আনতে
সন্ধ্যায় মা আছেন, ব্যস্ত ভাত-তরকারী রানতে।


মেয়ের শোকে মা, করে আকাশ ভাঙা আর্তনাদ
মেয়েটাকে হারালাম! আমারই সকল অপরাধ!
মেয়েটা এখনও ভাল করে চিনল  না এ  ধরণী
আমার ছেড়ে বিদায় নিল, আমার সোনা বরণী!


রচনা : ১৬.০৮.২০১৪ খ্রিঃ


ব্যাখ্যা : কবিতার মূল বিষয় বস্তু হল পৌষ মাসের এক সন্ধায়
গ্রামের এক বধু উঠানের কোণে রাতের ভাত-তরকারী রান্না করছিল, সে সময় বাড়ির কর্তা বাজারে ছিল, তাদের মেয়ে বারান্দায় পড়তেছিল, তখন বধূটি মেয়েকে বলল ঘর থেকে তেলের বোতল আনতে, মেয়েটি বোতল হাতে নিয়ে বারান্দা থেকে নামার সময় গলার ওড়নাটা পিছন দিকে ছুড়ে দিলে চালের বাঁশে পেচিয়ে যায় মেয়েটি তো বুঝতে পারে না যে তার ওড়না পেচিয়ে গেছে চালে, তারপর মেয়েটি যখন নিচে পা দেয় তখন সে ওড়নায়ই ঝুলে যায় কেউ বুঝতেও পারে না, কবিতার প্রথম বারো লাইন সান্ধ্যকালীন গ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, ১৩নং লাইন থেকে মৃত্যুর ঘটনাবলীর বিবরণ আছে, এটি একটি সত্য ঘটনা, শুধু মাত্র এই অলৌকিক ও বৈচিত্রময় মৃত‌্যুর জন্যই কবিতাটি লেখার উদ্দেশ্য, সবাইকে ধন্যবাদ।