তোকে বলছি শোন, আমার কাছে আর আসবি না
ঘৃণা কর, ভুলে যা, আমাকে  আর ভালবাসবি না।
তুই যা ওই পিতৃ-মাতৃহীন অবুঝ শিশুদের মনে
তা না হলে যা, ওই নোংরা বস্তা কাঁধে ওর সনে।


ওরা তোকে অতি যত্নে গলায় মালা পরিয়ে রাখবে
হয়তো বা তোকে পেয়ে মনের দুঃখ কষ্ট  ঢাকবে।
এত বলি তাও যাস না, বল কি পেলি মোর কাছে?
দিবারাত করিস বিরক্ত আর বৃথা ঘুরিস পাছে পাছে!


চেয়ে ওই দেখ ডাস্টবিনের পাশে মানুষ আর কুকুর
পঁচা দূর্গন্ধ  উচ্ছিষ্ট খেয়ে একত্রে জানাচ্ছে শুকুর!
যা যা ওই দূর্গন্ধের মাঝে বাঁচগে যা প্রাণ খুলে
কখ্খনো আমার কাছে আসবি না আর ভুলে।


হতচ্ছাড়া, বল, আমার মাঝে তুই কী এমন পেলি!
আহার-নিদ্রার মাঝেও শুধু জ্বালাস, বলি কী গেলি?
ওই দেখ নদী গর্ভে বিলীন  হওয়া সর্বহারার মুখ
ওর পাশে যা দেখ, ঢুকরে ঢুকরে কাঁদে ওর বুক!


ওই দেখ, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া মেধাবী ছেলে
অভাবের তাড়নায় স্কুল ত্যাগ করে সে রিক্সা ঠেলে!
যা ওর মনে গিয়ে বাসা বাঁধতে পারিস কিনা দ্যাখ
সংসারের জন্য নিজকে পুড়ায়, কি দারুণ আত্মত্যাগ!


আমি মাঠের কৃষাণ, নিয়ে পিতা-মাতা ভাই-বোন
নিরেট মূর্খ, সুখেই আছি, নিরালায় গাঁয়ের কোণ।
মাঠের খোলা আকাশ, বাতাস, সবুজ আর মেঘ
এরা তো মুছে দেয় আমার মনের যত উদ্বেগ!


আমার তো প্রেম নেই! ভালবাসিনি কোনো মেয়েকে
বল্ তো পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী আমার চেয়ে কে?
যা যা প্রেমে আঘাতপ্রাপ্ত ওই মানুষের বুকের খাঁচে
সবসময় আমাকে জ্বালাস! কি পাস আমার কাছে?


আর তা না হলে যা যুদ্ধাহত ওই বন্দী শিবিরে
ওখানে যা, যেয়ে তুই মনের মত প্রসাদ নিবি রে!
ওই দেখ, দেখ, কাঁটাতারে ঝুলছে দেশের মানচিত্র
যা যা যা ওই খানে গিয়ে এক্ষুণি পাতা গে তুই মিত্র।


মানচিত্রের মা রাখবে তোকে আদরে গয়ণায় মুড়িয়ে
সার্থক হবে জীবন তোর, কলিজাটা যাবে যে জুড়িয়ে!
আমার কাছে পড়ে থেকে শুধু কি আর পাবি বল?
দিতে পারব না সারা জীবনেও একটি ফোটা জল!


আমি তোকে কি বা আর পারি তেমন কিছু দিতে!
ঘুটিস না, যা কিছু আছে তা জমা থাকুক স্মৃতিতে।
আমার কাছে আছে পঞ্চাশটি শুষ্ক ফুলের মালা
তাতে যদি খুশি না হোস তবে আমায় ছেড়ে পালা।


তা না হলে বাস কর গিয়ে ওই শিশুদের নোনা জলে
সৎ মা'র লাথি-ঝাটা-লাঞ্চনা-গঞ্জণায় চোখদুটো টলটলে।
হতচ্ছাড়া! এসব শুনেও কেন যাচ্ছিস না মোর ছেড়ে
ও তাহলে কী বুঝব? আমাকে জেনে গেছিস তুই নেড়ে!


রচনা : ১১.০৯.২০১৪ খ্রিঃ