সে কথা তোর মনে পড়ে? খোলা আকাশের নিচে
মা ভাত রাঁধতেন আর তুই ল্যাংটা গায়ে তাঁর পিছে!
ক্ষুধার জ্বালায় কেঁদে কেঁদে, ধূলোয় দিতিস গড়াগড়ি
সস্নেহে বলতেন মা "সােনা আর একটু দেরি।"


ঘরের সমুখে উঠানের মাঝে বড়কুল গাছটিতে
থোকা থোকা জোনাকি ঝিকিমিকি জ্বলতো রাতে।
যেদিক চোখ যায়, কালো আর কালো, রাত থম্ থম্
হুতোম পেঁচার ডাক শুনে তোর গা করতো ছম্ ছম্ ।


ঝিঁ ঝিঁ পোকা ঘু-ঘু-ঘু করে ডাকতো চার পাশে
ভয় লাগলে বলতেন মা "এই না আমি কাছে।"
বাবা ব্যবসায়ী, বাজার থেকে ফিরতেন রাত করে
এসে বলতেন "বাবাজী আমার মাটিতে রয়েছে পড়ে?"


পায়ের শব্দ শুনে তুই বুঝতে পারতিস, ঘুমের ঘোরে
বাবা আসছেন একবুক তৃষ্ণা নিয়ে মাথা ওঠাতিস ওরে!
ব্যাগটিতে কি কি আছে টিপে দেখতিস ছোট্ট হাতে
খাওয়ার কিছু থাকলে, খাওয়া শুরু করতিস সাথে সাথে।


বাবা বলতেন "ভাত হয়নি ভাত দাও এর আগে"
"এত যন্ত্রণা সহ্য হয়না" মা বলতেন রেগে!
"এদিকে বাড়ির কাজ-কর্ম তারপর সদয় আনতে দেরি
এক দন্ড বিশ্রাম নেই আমি আর কত পারি!"


এদিকে ক্ষুধার জ্বালায় তোর পেটটি যেতো জ্বলে
"ভাত হয়েছে?" বলতিস ধূলা থেকে মাথা তুলে।
অশ্রুঝরা ক্লান্ত শরীর খেয়ে-দেয়ে মা'র বুকে
জানিস কখন শান্ত হয়ে নিদ্রা যেতিস সুখে!


"হায় অভাগা-এভাবেই কেটেছে তোর শিশুকাল-
সে কথা আজ মনে পড়লে, তোর চোখে আসে জল?"
আজ জোনাকীরাত আছে, হারিয়েছিস মায়ের হাসি
কেউ কি জানে? তোর  বুকে  বাজে বেদনার বাঁশি?


রচনা : ০৩.০৯.১৯৯৬ খ্রিঃ