পাড়ার সব ছেলেরা স্কুলে যায়, নতুন বই নিয়ে
আমি কেন যেতে পারি না? দেখি চেয়ে চেয়ে!
বইয়ের ঘ্রাণ শুঁকা হল না আমার, কী যে কষ্ট!
বইয়ের অক্ষর চেনা হল না, ওর মর্ম অস্পষ্ট!
বাবার উজ্জ্বল মুখখানি দেখিনি আমি জন্মাবধি!
মা মোদের বড় করেছে বহু সংগ্রাম করে নিরবধি।


বড় ভাই ও মেজ ভাই মজুর খাটে পরের ক্ষেতে
সেজটা পাশের গ্রামে এক বাড়ি থাকে পেটেভাতে।
আমার খুব ক্ষিদে লাগে, পেট পুরে খেতে পাই না!
ঘুরি ফিরি আর মায়ের কাছে করি নানা বায়না।
খাওয়ার সময় পাড়ায় পাড়ায় এর-ওর দোরে-
ক্ষুধার্ত চাউনীতে চেয়ে থাকি ফ্যাল ফ্যাল করে!


জানতে পেরে বড় ভাই একদিন করল বেদম প্রহার!
কষ্টে কীটনাশক পান করলাম, বাঁচতে চাই না আর।
ডাক্তার এল, আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে গেলাম এ যাত্রায়
বড় ভাই এক বাড়িতে পেটেভাতে রেখে এল আমায়।
আমায় দিয়ে লাঙ্গল চষায়, গরু চরায়, ঘাষ কাটায়
ঘরের কাজে পশুর মত খাটায়, জানটা বেরিয়ে যায়!


তিনবেলা পঁচা পান্তা, ঝাল-পিঁয়াজ পরশুদে ভাত
এই হল আমার খাবার, এভাবেই হয় দিনাতিপাত।
একদিন ঝাঁ ঝাঁ রোদে বিলের তলে গরু চরাচ্ছি
গোল গোল ছাতা বসিয়েছে কিছু লোক দেখেছি।
ওখানে গিয়ে একটু বসলাম ওদের ছাতার তলে
ওরা আমার সাথে অনেক কথা বলে গল্পের ছলে ৷


একটি বদনা দিয়ে একজন বলল একটু জল এনে দুবা
আমি বললাম দোবো, তালি তুমরা আমায় কি দুবা?
ওরা বলল আমরা তুমাকে গোস্ত ভাত খাতি দোবো
ঠিক আছে বদনা দেও আমি পানি এনে দোবো।
কথামত আমি ওদের পানি এনে দিলাম কষ্ট ক'রে
ওরা আমায় যত্ন করে ভাত খেতে দিল পেট ভ'রে।


খুশি হয়ে বাড়ি এসে মাকে বললাম মা মা শোন্
বিলের তলায় গোল গোল ছাতি বসিয়েছ ক'জন।
ওরা আমাকে পানি এনে দিতে বলল আমি দিলাম
ওরা আমায় পেট ভরে ভাত খাতি দেছে খালাম।
কি ছুন্দুর নলম নলম গোত্ত মা, যা মজা নেগেছিল
ওমা মা একথা শুনে কাঁনচিস ক্যান তোর কি হলো!


রচনা : ৩০.০৯.২০১৪ খ্রিঃ