১ম পর্ব-দুরন্ত কৈশোর।


ছোটবেলায় শখ ছিল রকমারি
চুরি করে বিড়ি খাওয়ার ঝকমারি
কপালগুনে সখা ও কিছু জুটেছিল
গ্রামের কয়েক গোপাল অধিনায়ক!
কেউ বাজাত বাশের বাঁশী
কেউবা ছিল পল্লীগীতি গায়ক।
নবান্নের শেষে আউশ ধানের জমি
হয়ে যেত গো-চারনের ভুমি
রাখালেরা গোল্লাছুটি নয়তোবা তারাগুটি
আর কত অভুতপূর্ব খেলা
এই ভাবেতে কেটে যেত সকাল দুপুরবেলা।


হেমন্তে বসিত গ্রামে জারিগানের পালা
গানে গানে কেটে যেত গ্রামবাসীদের বেলা,
তার পরেতে লেগে যেত যাত্রা পালার ধুম
গ্রামের নবীন নওজোয়ানেরচোখে নেইকো ঘুম।
সাতবিলের পাড়ে হত চৈত সংক্রান্তির মেলা
আনন্দেতে ঝিলিক দিত আমার ছেলেবেলা।
ছিটকি জাল পেতে বসতাম
রৌডহরের খালে
ঝাকে ঝাকে মাছ উঠিত চমকে যেত পিলে!
বঁড়শি বেয়ে নদীর পাড়ে অস্ত যেত বেলা
মাছরাঙার'ই মত ছিল আমার ছেলে বেলা।


২য় পর্ব-সুজন সখা।


গাছ বাইতে পটুছিলাম চঞ্চল স্বভাব
ডাবগাছের সহিত ছিল
আমার ভীষন ভাব!
সবুজ ছিল ডানপিটে
ডাবের ছড়ি বইত পিটে
গাছ বাওয়াতে আমার সাথে ছিল তাঁহার আড়ি,
মগডালের পেয়ারটা ও নিয়ে আসত পাড়ি
বিয়ে করে বৌয়ের সাথে
বিলেত দিছে পাড়ি।
সেই দেশে কি আছে তেমন
পেয়ারা গাছের সারি?


আর একটি সখা আমার মোঃইকবাল
মাটি থেকে নাগাল পেত গাছের উঁচু ডাল
লম্বা ছিল ভারী অনেকদিন হয় সেও এখন আছে বিলেত বাড়ি।
পাখির বাসা ভাঙ্গতে ছিল মস্ত বড় বীর
বিলেতবাসী আরেক বন্ধু বাদশাহ আলমগীর।


পরিপাটি করে দিত
চুলে মাথায় তেল ঢাকায় থাকে আরেক সুজন মোঃরুবেল।
ছেলেবেলার প্রানবন্ধুয়া নাম রুনু মিয়া
পড়ালেখা ছেড়ে গেলেন মালয়েশিয়া
বিদেশেতে মন টিকেনি ফিরে এলেন দেশে
বিয়ে করে গৃহবন্দি হয়ে গেলেন শেষে।


এদের সাথে মাঝে মাঝে হত ঝগরা ঝাটি
বিচার নালিশ ছাড়া ই তা হত মিটামিটি!
এদের ছাড়া জমিত না কোনপ্রকার খেলা
এদের নিয়েই মুখর ছিল আমার ছেলেবেলা।


৩য় পর্ব-পাঠশালা।


মনটা ছিল দিগন্ত হীন তেপান্তরের মাঠ
তিক্ত খাবার মনে হত পাঠ্য বইয়ের পাঠ!
স্কুলে গেলে মনে হত জীবনটাই খুঁত
মাস্টার মশাই ছিলেন একজন সাক্ষাত যমদুত!
পড়তে বসে মাকে বলতাম পেটে ভীষন ব্যাথা
মা তখন খেতে দিতেন ভাজা নিমপাতা!
মাকে তখন কেঁদে বলতাম ব্যাথা নেই গো মা,আজকে আমার পড়ালেখায় মন বসছেনা!
তার পরেতে চোখের পাতায় নেমে আসত ঘুম
খেয়ে ঘুমাস মায়ের মুখে আদরের হুকুম!
না খাইলে শুনতে হত বেজায় বকাবকি
এই কাজেতে মাকে কভু দেওয়া যায়নি ফাঁকি!
মায়ের হাতের পিঠা পায়েস মজার ছিল ম্যালা,
সব মিলিয়ে মধুর ছিল আমার ছেলে বেলা।


আমার ছেলেবেলা।


৪থ পর্ব-বেঁদেনীর প্রেম।


ইটাখোলা নদীর তীরে বেদে বস্তির বহর
রাত্রি হলে মনে হত আজব এক শহর!
বেদেরা দেখাত কত নাগ নাগিনীর খেলা
রোমাঞ্চিত হত তখন আমার ছেলে বেলা!
বেদে বসতীর এক রূপসি চুমকী তাহার নাম,
শঙ্খবীণ বাঁজিয়ে ছেমরি মাথায় তুলত গ্রাম।
তারই প্রেমে পড়ল আমার একটি রাখাল সখা
মাঠে গেলে তাহার সহিত হইতোনা আর দেখা!
এক রাত্তিরে ঐ বেঁদেনী ছাড়ল বস্তি গ্রাম
নিঁখোজ হল রাখাল বন্ধু অনেক খুঁজিলাম!
তার পরে ও শেষ হয়নি খোঁজা খুঁজির পালা
আজ ও আমি খুঁজি আমার
নিঁখোজ ছেলে বেলা।