প্রায় তিন যুগেরও অধিক সময় পিছনে ফেলে এসেছি
আমার শৈশব ও কৈশোর, এখন আমার চোখের সামনেই,
শৈশব কৈশোর পার করছে আমার একমাত্র কন্যা ও পুত্রগন।
কী সরল নিস্পাপ! দুঃখ দৈন্যের কোন তাপ সন্তাপ নেই তাদের,
তনু মনে। বোধকরি শৈশব কৈশোরের সারল্য সব যুগেই সমান?
আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে-
নদী পুকুর ঘাটে ময়দানে মাঠে খেলা আর মেলায়।
এখনকার ছেলেমেয়েরা মোবাইল ট্যাবলেট ল্যাপটপ টিভি-
স্ক্রিনের সামনে বসে, ভাতের নলা মুখে পুরে গিলতে ভুলে যায়।
মানতেই হবে "যস্মিন কালে যদাচার-তস্মিন তদ্রুপ লোকাচার"
বর্তমানের ফাঁক ফোকর দিয়ে অতীতের দিনগুলো উঁকি দেয়,
আমার স্মৃতিতে, আমার ছেলেবেলা ভেংচি কাটে আমাকে।
কী সরল সুবোধ বালক ছিলাম, নিজের ক্ষুৎপিপাসার পাত্তা,
না দিয়ে,পোষা পাখির ছানার আদার যোগারের চিন্তায়ই,
ছিলাম ব্যতিব্যস্থ, ঘাসফড়িং ধরতে গিয়ে বাতাসের দুল-
দুলুনিতে, ধানের পাতা নড়ে উঠলে বলতাম চুপ- চুপ,
নড়িস না ফড়িং উড়ে যাবে। তথাপি পাতার দুলুনি বন্ধ
না হলে, রাগ করে থাপ্পড় মারতাম কচি পাতার গালে গুচ্ছে।
পৌষ মাঘের শীত ছাড়া সারা বছরই দলবেঁধে সাঁতার
কাটতাম,খা বাড়ির দীঘি সমান পুকুরে,কার্তিক মাসে
স্রোতহীন ইটাখোলা নদীর পাড় প্যাক কাদায় পিচ্ছিল
করে উদাম গতরে গড়িয়ে পড়তাম নদীর জলে!
এর নাম ছিল ছেরছেরি খেলা। বাঁশকাঠির তারা গুটি,
জাম্বুরার ফুটবল, সুপারির খোলে ব্যাডমিন্টন, মুর্তা পাতার
টাকা, বুনো ফুল ফলের খেলনা দোকান! কলাপাতার ঢাঁটি
চড়ে ঘৌড়দৌড়, শুন্যলতার তারে ওয়্যারিং দিয়ে কলমি ফুলে
মাইকের চোঙা,অঘ্রাণ মাসে কলার পাঁচনে-বোলাবুলির বাড়াবাড়ি।
দু'তিন সুতি রডের গোলকার রিং-কয়েল তারের হ্যাণ্ডেল স্টিয়ারিং
নিয়ে শাসরুদ্ধকর গাড়ি চালানোর দৌড়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা।
খেলতাম জোড় বিজোড়, চোর পুলিশ, লুকালুকি তুক্কুত,
মাটির পাতিলভাঙ্গা চাঁর দিয়ে মাটিতে কোটা এঁকে কুতকুত,
কাবাডি ডাংগুলি, কানামাছি-গোল্লাছুট-বন্ডি, মাঠে দাইড় কেটে "ঋ" খেলা।
শীমের বিচি বাঁশের স্কেলে সারবেঁধে রেখে ভাঙ্গা মাটির পাতিল,
বা লোহারির চাকতি দিয়ে ঠুকে ফেলা ,মার্বেল গুটির মত পাথর,
দিয়ে শেল খেলার বোল, ফুল ফুল ফুলটি একে দুলটি।
দপ্পা এক দপ্পা দুই, দাবার চালের মত ষোলগুটির খেলা,
খালি সিগারেটের প্যাকেট কুড়িয়ে বাকসো খেলার নেশায়,
রান্নাঘরের ভালো মাটির হাঁড়ি লোহারি ভেঙ্গে চাঁর বানিয়ে,
মার খাওয়ার কথা, রাতে ঘুমিয়ে সকালে ভুলে যাওয়া!
টুপাটুপি খাওয়া-মেয়েলি পুতুল বিয়ের বরযাত্রী যাওয়া।
টিফিনের টাকায় মার্বেলগুটি আর দাগা কিনে ফতুর হয়ে যাওয়া,
স্কুলের আইসক্রিম ওয়ালা বাদাম লাড্ডু ওয়ালার কাছে বারোমাস বাকিসিকি খাওয়া।
মাটির ব্যাংকে ঘরের বাঁশের পালায় জমানো পয়সায়, চাঁদা দিয়ে চামড়ার ফুটবল কিনে,
একেক দিন একেক জনের বাড়িতে রাখার বায়না আর আয়না-
চিরুনি পুরস্কার জিতে,চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আকাশচুম্বী আনন্দ!!
আমাদের খেলাধুলায় হারজিত মারপিট মারামারি
দলাদলি অনৈক্য কদাচিৎ হতো।
বরাবর মিলমিশ সহমর্মিতা ছিল যমজ ভাইবোনের মত।